বেদের কোথাও সতীদাহের উল্লেখ না থাকা সত্ত্বেও কিভাবে হিন্দু সমাজে সতীদাহ এলো ? - UHC বাংলা

UHC বাংলা

...মুক্ত চিন্তায় বিশ্বাসী একটি গ্লোবাল বাংলা প্লাটফর্ম!

ব্রেকিং নিউজ

Home Top Ad

Thursday, April 18, 2019

বেদের কোথাও সতীদাহের উল্লেখ না থাকা সত্ত্বেও কিভাবে হিন্দু সমাজে সতীদাহ এলো ?

লেখাটি অপপ্রচারের বিরুদ্ধে একটি দৃষ্টান্তমূলক জবাব
সেদিন হটাৎ  ইষ্টিশন ব্লগের একটি লেখায় চোখ আটকে গেলো।  হেডলাইনটা ছিল সতীদাহ প্রথা কেন হিন্দু ধর্মের প্রথা হবে না? লেখাটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক ভাবে শেয়ার  হয়েছে। লেখাটি আমি ভালো ভাবে পড়লাম। সেখানে লেখক সতীদাহ যে বেদে উল্লেখ্য আছে তা দৃঢ় ভাবে উপস্থাপন করেছেন। তিনি এটাও ব্যক্ত করেছেন যে সতীদাহ শুধু মাত্র হিন্দু ধর্মের একটি প্রথা বলেই পরিচিত যা হিন্দু ধর্মা্বলম্বীদের কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। এটা নিতান্ত একটি হাস্যকর দাবি। সতীদাহ শুধু হিন্দু ধর্মে নয় বৌদ্ধ ধর্মে, শিখ ধর্মে, জৈন্, খ্রিষ্টান  ধর্মে ( শ্রীলংকা) এমনকি ইসলাম ধর্মে ( ভারতের বিহার, কাশ্মীর ) এ ধরণের প্রাকটিস দেখা গেছে।  উইকিপিডিয়া থেকে জানা যাচ্ছে,


A similar practice of widow suicide to follow her husband or fiancé, states Hai-soon Lee, existed in medieval Korea, in accordance with the traditional Confucian ethos.[56] According to Martina Deuchler, this practice was praised as misok (beautiful custom), and the dead widow praised as "faithful wife", in the historic Korean culture and literature.[57]

Historical documents attest to the public self-immolation practice (self cremation, as shaoshen 燒身 or zifen 自焚)[58] among Buddhist nuns (and monks) in ancient and medieval China for religious reasons.[59][60][61] This was considered as evidence of a renunciant bodhisattva, and may have been inspired by the Jataka tales wherein the Buddha in his earlier lives immolates himself to assist other living beings,[62] or teachings in the Lotus Sutra.[63] The Chinese Buddhist asceticism practices, states James Benn, were not an adaptation or import of Indian ascetic practices, but an invention of Chinese Buddhists, based on their unique interpretations of Buddhists texts.[64] It may be an adoption of more ancient pre-Buddhist Chinese practices.

অর্থাৎ চীন ও কোরিয়াতে কালচারাল সতীদাহের প্রমান মিলছে। আপনি যদি উইকিপেডিয়াতে দেখেন সেখানে দেখা যাচ্ছে শুধু চীন বা কোরিয়া নয় ভিয়েতনাম  ও বার্মাতে  সতীদাহের প্রমান আছে। তাহলে ইস্টিশন ব্লগারের প্রথম দাবি ভুল প্রমানিত হলো।

আরো দেখুন : যে উপবাস পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা করে জাপানী বিজ্ঞানী নোবেল পুরস্কার পেলেন

তারপর তিনি সতীদাহ নিয়ে যে মনগড়া দাবি করেছেন তা ঘাটতে গিয়ে আমি রীতিমতো শক খেলাম। আমার ধারণা তিনি একজন মুসলিম লেখক  তিনি বেদকে বিকৃত করেছেন। তিনি সম্পূর্ণ ভুলভাবে উপস্থাপন করেছেন বা অনুবাদ করতে অসমর্থ হয়েছেন। আসলে বেদের  ১০/১৮/০৭ এবং ১০/১৮/০৭  এর অনেক ভুল অনুবাদ রয়েছে। এগুলো সংস্কৃত থেকে পশ্চিমারা ইংরেজিতে অনুবাদ করে। বিভিন্ন জন বিভিন্ন ভাবে অনুবাদ করেন।  আগে দেখায় ইস্টিশন ব্লগার যে ভুল ইংরেজিটা পিক করেছেন এবং তার বাংলা করতেও তিনি অসমর্থ হয়েছেন।

इमा नारीरविधवाः सुपत्नीराञ्जनेन सर्पिषा संविशन्तु |
अनश्रवो.अनमीवाः सुरत्ना आ रोहन्तु जनयोयोनिमग्रे || (RV 10.18.7)
This passage and especially the last of these words has been interpreted in different ways, as can be seen from various English translations:

May these women, who are not widows, who have good husbands, who are mothers, enter with unguents and clarified butter:
without tears, without sorrow, let them first go up into the dwelling.[204] (Wilson, 1856)
বাংলা : এই মহিলারা, যারা বিধবা না, যাদের ভাল স্বামী আছে, যারা মা ( মায়েরা),  তাদের অশ্রু ছাড়া, দুঃখ ছাড়া স্পষ্ট মাখন মেখে গৃহে  প্রবেশ করতে দিন।  [204] (উইলসন, 1856)
এবার দেখি কানে (Kane) কিভাবে এটাকে ভুল ভাবে উপস্থাপন করেছেন (ইস্টিশন ব্লগার এটাই পিক করেছেন)।
Let these women, whose husbands are worthy and are living, enter the house with ghee (applied) as collyrium (to their eyes).
Let these wives first step into the pyre, tearless without any affliction and well adorned.[205] (Kane, 1941)
অর্থাৎ এই মহিলারা, যাদের  স্বামী যোগ্য এবং জীবিত, তাদের   কোলরিয়াম (কজ্জল) (তাদের চোখে ) এবং ঘি  ( প্রয়োগ করে ) ঘরে প্রবেশ করতে দিন । এই স্ত্রীদের প্রথমে  কোনও দুঃখকষ্ট ছাড়া এবং সুন্দর সাজানো চিতায় প্রবেশ করতে দিন । [205] (কেন, 1941)
এবার দেখুন এই দুই অনুবাদের মধ্যে কি আকাশ পাতাল তফাৎ। উইলসন বলছেন তাদের গৃহে প্রবেশ করতে দিন। এদিকে কানে বলছেন তাদের চিতায় প্রবেশ করতে দিন। কানের অনুবাদ কতটা হাস্যকর তা আপনি বুঝতে পারছেন।

Verse 7 itself, unlike verse 8, does not mention widowhood, but the meaning of the syllables yoni (literally "seat, abode") have been rendered as "go up into the dwelling" (by Wilson), as "step into the pyre" (by Kane), as "mount the womb" (by Jamison/Brereton)[206] and as "go up to where he lieth" (by Griffith).[207] A reason given for the discrepancy in translation and interpretation of verse 10.18.7, is that one consonant in a word that meant house, yonim agree ("foremost to the yoni"), was deliberately changed by those who wished claim scriptural justification, to a word that meant fire, yomiagne.[208]
অর্থাৎ বেদের শ্লোক ৭ শ্লোক ৮ এর মতো বিধবা উল্লেখ করেনি। কিন্তু যোনি (yoni) একটি সংস্কৃত শব্দ যার প্রকৃত অর্থ বসা, উপরে। এটা  দ্বারা উইলসন বুঝিয়েছেন  " গৃহের  মধ্যে যেতে" - "go up into the dwelling" , কানে বুঝিয়েছেন "চিতায় প্রবেশ করতে"-"step into the pyre" , জামিসন / বারেরটন বুঝিয়েছেন "গর্ভে  প্রবেশ করতে" - "mount the womb" এবং গ্রিফিথ বুঝিয়েছেন সেখানে যায় যেখানে সে (পুরুষ) শুয়ে আছে (যৌন অর্থে) -   "go up to where he lieth". বেদের শ্লোক ১০/১৮/৭ এর অমিল থাকার কারণ হচ্ছে বেদের কয়েকটি শব্দ বুঝতে, অনুবাদ ও ব্যাখ্যা করতে না পারা। যেমন ঐ শ্লোকের একটি শব্দ যার অর্থ "গৃহ"  কে ( yonim agree/"foremost to the yoni" ) জেনে শুনে "আগুনে"( yomiagne ) পরিবর্তন করেছেন  (শাস্ত্রীয়  ন্যায্যতা ভুলভাবে প্রতিপাদন/ প্রতিস্থাপন করেছেন)।

In addition, the following verse, which is unambiguously about widows, contradicts any suggestion of the woman's death; it explicitly states that the widow should return to her house.
অর্থাৎ নিচের শ্লোক (ঋগ্বেদ  10.18.8) যা বিধবা সম্পর্কে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে নারীর মৃত্যুর ( স্বামীর মৃত্যুর পর) বিরোধিতা করে। এটা স্পষ্টভাবে বলে যে বিধবার  তার বাড়িতে ফিরে আসা উচিত।

उदीर्ष्व नार्यभि जीवलोकं गतासुमेतमुप शेष एहि |
हस्तग्राभस्य दिधिषोस्तवेदं पत्युर्जनित्वमभि सम्बभूथ || (RV 10.18.8)

Rise, come unto the world of life, O woman — come, he is lifeless by whose side thou liest. Wifehood with this thy husband was thy portion, who took thy hand and wooed thee as a lover.
এই শ্লোক কিন্তু মৃত স্বামীর ভাই তার বৌদি কে বলছেন যার  অনেকে  অনুবাদ উফেক্ষা করেছেন। এটা ঠিক ভাবে তুলে ধরলে দাঁড়াচ্ছে -
"স্বামীর  ভাই বলে; উঠো , জীবনের জগতে এসো  ওহে নারী, এসো,তার মৃত্যু হয়েছে যে এতো দিন তুমি যার পাশে ছিলে। এতো দিন তুমি যার সাথে তোমার  বিবাহিত জীবন অতিবাহিত করেছ , যে প্রেমিক হিসেবে তোমার হাত ধরেছিলো - তোমার সে জীবনের অবসান ঘটেছে।
উল্লেখ্য যে তখন এটি একটি প্রথা ছিল যে মহিলা তার স্বামীর মৃতদেহের পাশে শুয়ে থাকবে এবং তারপর স্বামীর ভাই  তার হাত ধরে তাকে উপরে উঠিয়ে বলবে  - জীবনের জগতে ফিরে আসার জন্য।

অথর্ববেদও বিধবাদের পুনর্বিবাহ উল্লেখ করেছে:
Yā pūrvam pati vittvāthānya vindate’param | Pañcaudanaṃ ca tāvajaṃ dadāto na vi yoṣataḥ || AV 9:5:27

A woman who having realised the Primordial Lord of the Universe takes another man as her husband, is never separated from the Divine, along with her [new] husband if they surrender to God.

অর্থাৎ একজন নারী যিনি মহাজগতের  ঈশ্বরকে  উপলব্ধি করেন, তিনি অন্য স্বামীকে তার স্বামী হিসাবে গ্রহণ করেন, তিনি  স্বর্গীয়  সম্পর্ক হতে কখনো আলাদা হন না  এবং তার [নতুন] স্বামীর সাথে  ঈশ্বরের কাছে আত্মসমর্পণ করেন ।

Samāna loko bhavati punarbhuvāparaḥ patiḥ | Yo3jaṃ pañaudanaṃ dakṣiṇājyotiṣaṃ dadāti || AV 9:5:28

He who surrenders to God, and is adorned with generosity to all, being the second husband of the re-married woman attains to the beautiful Lord as does his wife.
যে পুরুষ ঈশ্বরের  কাছে আত্মসমর্পণ করে এবং সে সবার কাছে  উদারতার সাথে শোভিত কোন নারীকে পুনরায় বিয়ে করে  দ্বিতীয় স্বামী হওয়ার জন্য।  আর  তার স্ত্রী হিসাবে সে একজন সুন্দর পালনকর্তা পায়। অর্থবেদ ৯/৫/২৮
Atharvaveda 18.3.1
Choosing her husband's world, O man, this woman lays herself down beside thy lifeless body. Preserving faithfully the ancient custom Bestow on here both wealth and offspring [Translation by Griffith]
এই মন্ত্রে 'তার স্বামীর পৃথিবী বেছে নেওয়া' শব্দটি প্রায়শই ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয় যে পরবর্তীতে স্বামীর মৃত্যুর পর  স্ত্রীকে মৃত স্বামীর সাথে  যোগ দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। তাই সে নিজের স্বামীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াতে নিজেকে পুড়িয়ে ফেলবে।
এই মন্ত্রের এই মন্ত্রের সঠিক ব্যাখ্যা হলো -
এই মহিলারা  আগে তার স্বামীদের জগৎ অনুসরণ  করেছে। আজ সে (স্ত্রী ) তোমার মৃত দেহের পাশে বসে আছে। এখন এই পৃথিবীতে তার পরবর্তী জীবনযাপন চালিয়ে যাওয়ার জন্য তার বাকি জীবনের জন্য ধনসম্পদ ও সন্তান উভয়েই এখানে দান করুন।
সুতরাং, এই মন্ত্র তার স্বামী মৃত্যুর পর স্ত্রীকে  এই বিশ্বের  পার্থিব জগতের  ধারাবাহিকতা চালিয়ে যাওয়ার  কথা বলে।
এখন এটি সুস্পষ্ট ভাবে প্রমাণিত হলো যে ইস্টিশনের ব্লগার ভুল ভাবে বেদ উপস্থাপন করেছেন শুধু মাত্র ভুল অনুবাদগুলোর উপর জোর দিয়ে।  তিনি সঠিক অনুবাদের কথা একবার উল্লেখ করেন নাই।
আরো দেখুনঃ হিন্দু নারীরা জীবন বাঁচাতে যেভাবে সতীদাহ ও জাওহার বেছে নিতেন
এবার আসি পরবর্তী অংশে।  পরবর্তী অংশে তার সাথে আমি খানিকটা একমত পোষণ করি। তিনি বলেছেন হিন্দু সমাজে অনেক আগে থেকে সতীদাহ প্রচলিত ছিল। তার প্রমান হিসেবে তিনি ভারতের বিভিন্ন জাদু ঘরের সংরক্ষিত পাথরের লেখা উপস্থাপন করে। এখানে তার সাথে দ্বিমত পোষণ করার কোন কারণ নেই। কিন্তু তিনি দুটি জিনিস গুলিয়ে ফেলেছেন। সমাজে প্রচলিত থাকা আর ধর্মীয় গ্রন্থে উল্লেখ থাকা।  ধর্মীয় গ্রন্থে (বেদে ) উল্লেখ থাকা যে ভুল ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তা এতক্ষনে প্রমান হয়েছে। কিন্তু সমাজে সতীদাহ কিভাবে এলো তা ঘটলে গেলে ইতিহাস ঘাটতে  হবে। তবে মহাভারতে সতীদাহের একটি ঘটনা পাওয়া যায়। ঘটনাটি এরকম। পাণ্ডুয়ের দ্বিতীয় স্ত্রী মাদ্রি স্বামীর চিতায় ঝাঁপ দিয়েছিলেলন । তিনি বিশ্বাস করেন যে তিনি তার স্বামীর  মৃত্যুর জন্য দায়ী। কারণ তিনি  মাদ্রির সঙ্গে নিষিদ্ধ কাজ করার সময় তিনি মারা যান। আর জন্য মাদ্রী নিজেকে দ্বায়ী করেন।  এখানে মাদ্রী কোন ধর্মীয় কারণে বা ধর্মীয় গ্রন্থ অনুসরণ করে চিতায় ঝাঁপ দেননি। তিনি সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত কারণে নিজেকে আত্মহত্যায় ( চিতায়) বলি দিয়েছেন। প্রশ্ন হলো কোন   স্ত্রী  যদি তার স্বামীর উপর অভিমান বা রাগ করে আত্মহত্যা করে তার জন্য কি আমরা ধর্মকে দায়ী করবো ?
ইতিহাস ঘেটে পাওয়া যায় সতীদাহের প্রথম সূত্রপাত হয় নেপালে ক্রিস্টপূর্ব ৪৬৪ সালে  (Axel Michaels) এবং ভারতে ৫১০ ক্রিস্টপূর্বে! তবে গুপ্তবংশের রাজত্বকালে বর্তমান পাকিস্তানের তক্ষশীলায়  (Taxila ) সতীদাহের দু-একটি প্রমান পাওয়া যায়। একথা সত্য ধর্মে না থাকলে সমাজে দু-একটি করে সতীদাহের ঘটনা ঘটতো মাঝে মধ্যে। তবে এগুলো মহামারী আকার ধারণ করে মুঘলরা এদেশে আসার সময় থেকে।
পক্ষান্তরে, জাওহার (Jauhar) হচ্ছে মুসলিম শাসকরা যখন কোন নতুন হিন্দু রাজ্য দখল করতো তখন যুদ্ধে হিন্দু সৈন্য, রাজা বা অন্যান্যদের মৃত্যুর পর (অথবা আগে) তাদের স্ত্রীদের জোরপূর্বক ধর্ষণ বা বিয়ে করতো। তাই হিন্দু নারীরা নিজ স্বামীর করুন মৃত্যুর পর অথবা আগে নিজের সম্ভ্রম মুসলিম শাসকদের হাতে তুলে দেবার চেয়ে মৃত্যুকে শ্রেয় মনে করতো। তাই হিন্দু নারীরা মুসলিম শাসকদের হাত থেকে রক্ষার জন্য আগুনে ঝাঁপ দিয়ে বা বিষ পানে আত্মহত্যা করতো। এই প্রথা রাজস্থানে ও মধ্যপ্রদেশে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।এই প্রথা জাওহার নামে পরিচিত।
ইতিহাসে জাওহার : ৭১২ সালে মুহাম্মদ বিন কাসেম যখন সিন্ধু আক্রমণ করেন তখন এখানকার হিন্দু রাজা ছিলেন দাহির(Dahir)।মুহাম্মদ বিন কাসেম ও তার সৈন্য বাহিনী রাজা দাহিরকে হত্যা করে রাজধানী দখল করে নেয়। তখনো ভিতরের সৈন্যদের দ্বারা রাজমহল সুরক্ষা করে রেখেছিলেন কয়েক মাস ধরে।মুহাম্মদ বিন কাসেম ও তার সৈন্য বাহিনী যখন রাজমহল দখল করে সকল পুরুষ সৈন্যকে হত্যা করে তখন রানী ও ভিতরে থাকা অন্যান্য নারীরা আগুনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে।
আরো দেখুন : যেসব উপায়ে আপনি সনাতন ধর্মের অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন  


১২৩২ সালে যখন সামসুদ্দিন (দিল্লির সুলতান)  গোয়ালিওর (Gwalior)কেল্লা  আক্রমণ করেন তখন কেল্লায় থাকা সকল নারীরা আগুনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন যারা সবাই ছিলেন রাজপুত। 
১৩০১ সালে যখন দিল্লির সুলতান আলাউদ্দিন খিলজি  (Ranthambhor)রানথামবোর কেল্লা  আক্রমণ করেন তখন কেল্লায় থাকা সকল নারীরা আগুনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন।
এর পর ১৩০৩ সালে দিল্লির সুলতান আলাউদ্দিন খিলজি যখন চিতোরের রানী পদ্মাবতীর সৌন্দর্য্যের কথা জানতে পারেন তিনি কৌশলে রাজার মাধ্যমে রানীকে দেখতে চান। রাজা রানীর সাথে দেখা করতে অস্বীকৃত জানানোর পর আলাউদ্দিন খিলজি সৈন্য সামন্ত নিয়ে চিতোর কেল্লা  আক্রমণ করেন। তখন রানী পদ্মাবতীসহ সকল নারী শয়তান আলাউদ্দিন খিলজি কাছে সম্ভ্রম না হারিয়ে আগুনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন।
১৩২৭ সালে মোহাম্মদ বিন তুগলাখ কর্ণাটকের কম্পিলি(Kampili) রাজ্য আক্রমণ করেন তখন সেখানকার নারীরা আগুনে ঝাঁপ দিয়ে জাওহার সম্পন্ন করেন।
 ১৫২৮ সালে মুঘল সম্রাট বাবর যখন মধ্য প্রদেশের চান্দেরি দুৰ্গ (Chanderi fort) আক্রমণ করেন তখন সেখানকার নারীরা শিশু সন্তানসহ আগুনে ঝাঁপ দিয়ে জাওহার সম্পন্ন করেন।
এর পর মুসলিম সম্রাট বাহাদুর শাহ ১৫৩৫ সালে আবার চিতোর আক্রমণ করেন। যুদ্ধে চিতোরের রাজা মারা যান। তখন রানী দিল্লির সম্রাট হুমায়ূনকে ভাই হিসেবে রাখী উপহার পাঠান এবং সাহায্য কামনা করেন।কিন্তু হুমায়ূনের সৈন্য বাহিনী পৌঁছানোর আগে দুর্গে ঢুকে যান। তখন রানীসহ ১৩,০০০ হিন্দু নারী বিষ পানে (gunpowder) আত্মহত্যা করেন।এটি চিতোরের দ্বিতীয় জাওহার নামে পরিচিত।
চিতোরের তৃতীয় জাওহার : ১৫৬৭ সালে সম্রাট আকবর রাজস্থানের চিতোর কেল্লা আক্রমণ করেন। আকবরের সৈন্যরা ১৫৬৮ সালের সম্পূর্ণ ভাবে চিতোর দখল করে নেয়। আকবর সেখাকার হিন্দুদের দুইটি চয়েস দিয়ে ছিলেন। হয় ইসলাম গ্রহণ কর নয়তো মৃত্যুকে বেছে নাও। কেউ কেউ জীবন ভয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু হাজার হাজার হিন্দু পুরুষ মৃত্যুকে বেছে নিয়েছিলেন। যারা ইসলাম গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন আকবরের সৈন্যরা তাদেরকে হত্যা করে রক্তের নদী সৃষ্টি করেছিলেন। আর নারীরা বিষপানে ও আগুনে ঝাঁপ দিয়ে মৃত্যুকে বেছে নেয়। ইটা ছিল ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জাওহার।
মধ্যপ্রদেশের রাইসেনে(Raisen) তিনটি জাওহার হয় ১৫২৮, ১৫৩২ ও ১৫৪৩ সালে যখন হুমায়ুন রাইসেন আক্রমণ করেন। এই জাওহারে শতশত মহিলা মারা যান।
১৬৩২ সালে আওরঙ্গজেব মধ্যপ্রদেশের বুন্দেলা (Bundela) আক্রমণ করেন। আক্রমণের খবর শুনে অধিকাংশ নারীরা জাওহারের মাধ্যমে মৃত্যুকে বেছে নেন। যারা বেঁচে ছিলেন তাদের জেনানা'র মাধ্যমে ইসলাম গ্রহণ করতে বাধ্য করা হয়। পুরুষদের ইসলাম গ্রহণ করতে নির্দেশ দেয়া হয়। যারা গ্রহণ করেনি তাদের হত্যা করা হয়।
এইসব রাজপূত ও মধ্যপ্রদেশের হিন্দুরা নারীরা যে সবক্ষেত্রে স্বামীর মৃত্যুর পর জাওহারের মাধ্যমে মৃত্যুবরণ করেছেন তা হয়।
আরো দেখুন : আমেরিকান ইঞ্জিনিয়ার দুর্ঘটনাবশত: মোবাইলের ব্যাটারী আবিষ্কার করলেন যা ৪০০ বছর চলবে !  
অধিকাংশ ক্ষেত্রে নারীরা সন্তান সহ আগে মৃত্যুকে বেছে নিয়েছে ( মুসলিম শাসকদের হাত থেকে রক্ষার জন্য )।স্বামীরা পরের দিন শাখা ব্রত পালনের মাধ্যমে যুদ্ধ করতে করতে মারা গেছেন। একটি কথা জেনে রাখা ভালো রাজপূত নারী-পুরুষরা মুসলিম শাসকদের কাছে জীবন্ত গৃহবন্ধী হওয়ার চেয়ে মৃত্যুকে শ্রেয় মনে করতো।সুতরাং দেখা যাচ্ছে বেদে না থাকলেও প্রাচীন কালে খুব অনাকাঙ্খিত ভাবে দু একটি সতীদাহ ঘটতো। সেটি হতে পারে ব্যক্তিগত পারিবারিক বিশ্বাস অথবা সামাজিক অনাচার। কিন্তু মুঘলদের আগমনে তাদের অত্যাচার এবং স্বামীকে হত্যা করে হিন্দু নারীদের জোরপূর্বক বিয়ে ও ইসলামে ধর্মান্তরিত করাই ছিল হিন্দু সমাজে সতীদাহ এডাপশনের কারণ।
তবে সম্রাট আকবর সতীদাহ বন্ধে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিলেন যা কোন কাজে আসেনি। সেটা ছিল অনেকটা এরশাদের মুখে হিন্দু ধর্মের গুনগান করা। উল্লেখ্য এরশাদ বাংলাদেশের রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম এবং বাংলা নববর্ষ ভিন্ন দিনে করার সংবিধান করেছিলেন।
সম্রাট জাহাঙ্গীর দেখলেন কাশ্মীরে হিন্দু ও মুসলমানদের ব্যাপক ভাবে সতীদাহ প্রচলিত আছে। তখন সম্রাট জাহাঙ্গীর কাশ্মীরে মুসলমানদের মধ্যে সতীদাহ বন্ধের উদ্যেগ নেন এবং তিনি মুসলমানদের ফেরাতে সক্ষম হন।
এর পর আওরঙ্গজেব ঘোষণা দেন যে তার শাসন আমলে তার রাজ্যের কোন স্থানে কোন ধর্মীয় মানুষ সতীদাহ করতে পারবে না। তিনি অনেক সফল হয়েছিলেন। তার শাসনের শেষ দিকে তার রাজ্যে সতীদাহ প্রায় ছিলো না বলা চলে। তবে ব্রিটিশ পিরিয়ডে বাংলায় হিন্দুদের মধ্যে সতীদাহের ব্যাপকতা দেখা যায়। রাজা রামমোহন রায়ের উদ্দ্যেগে তা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়।[full_width]
এই গুরুত্ত্বপূর্ণ আর্টিকেলটি ধৈর্য্য সহকারে পড়ার জন্য ধন্যবাদ

1 comment:

পোস্টটি ভালো লাগলে কমেন্ট করুন। আপনার কোন তথ্য সংরক্ষণ বা প্রকাশ করা হবে না। আপনি Anonymous বা পরিচয় গোপন করেও কমেন্ট করতে পারেন।

অন্যান্য

Post Bottom Ad

আকর্ষণীয় পোস্ট

code-box