থাইল্যান্ডের অত্যাশ্চর্য গ্র্যান্ড প্যালেস থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের সোয়াইতে (Soi) স্থানীয় লোকের কাছে থাইল্যান্ডের মন্দির গুলি প্রত্যেকে নিজের মহিমায় সুন্দর। থাইল্যান্ডের বৌদ্ধ মন্দিরে আপনি যেমন সুন্দর সুন্দর বৌদ্ধ মূর্তি দেখবেন ঠিক তেমনি হিন্দু দেবদেবীর মূর্তি যেমন গণেশ বা ব্রম্মা খুজে পাবেন। শুনতে অদ্ভুত লাগছে, তাই না ? মোটেও না।আমি এখনই বিষয়টি ব্যাখ্যা করবো।আর এই সুন্দর সুন্দর মন্দিরগুলি থাইল্যান্ডের ট্যুরিস্টদের প্রধান আকর্ষণ।ভ্রমণের ক্ষেত্রে থাইল্যান্ড বিশ্বের একটি অন্যতম প্রধান আকর্ষণীয় স্পট।
সুবর্ণভূমি বিমানবন্দর, ব্যাঙ্কক @Travel and Lifestyle Diaries
থাইল্যান্ডের একটি হিন্দু অতীত আছে
থাইল্যান্ড একটি দেশ যেখানে 95% জনগোষ্ঠী বৌদ্ধ যা সর্বদা ছিল না। থাইল্যান্ড অতীতে - থাইল্যান্ড নামেও পরিচিত ছিল না - বিভিন্ন শাসকগোষ্ঠী ধারাবাহিক ভাবে থাইল্যান্ড শাসন করে, কিন্তু প্রথম এটি শক্তিশালী খেমার সাম্রাজ্যের দ্বারা শাসিত হয়েছিল। এই সাম্রাজ্য যা এখন আধুনিক কম্বোডিয়া নামে পরিচিত মূলত হিন্দুধর্মের অনুসারী ছিল। এর ফলে থাইল্যান্ডসহ খেমার রাজার নিয়ন্ত্রণাধীন স্থানগুলিতে হিন্দু ধর্ম ছড়িয়ে পড়েছে।
খেমার সাম্রাজ্য আধুনিক দিনের থাইল্যান্ডে শাসন করেছিল এবং তারা হিন্দু পদ্ধতি অনুসরণ করে জমির পরিমাপ করতো।তারা ছিল প্রচন্ড ধার্মিক। এর ফলে হিন্দু সংস্কৃতি ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছিল। থাইল্যান্ডের ভিত্তি থেকে হিন্দুধর্মের শিকড়গুলি সারা দেশে স্পষ্ট। উদাহরণস্বরূপ থাইল্যান্ডের সাবেক রাজধানী আইয়ুথের (Ayutthaya) নামকরণ করা হয়েছিল হিন্দু অবতার রামের জন্মস্থান অযোধ্যার নামে। যখন ঈশানের (Isaan) ফানম রাং (Phanom Rung) মন্দির খেমার শৈলীতে নির্মিত হয়েছিল, এটি হিন্দু দেবতা শিবকে উৎসর্গ করেছিলেন এবং এটিকে পবিত্র কৈলাশ পর্বত (Mount Kailash) হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছিল। এমনকি থাইল্যান্ডের জাতীয় গ্রন্থ মহাকাব্য রামাকিয়ান (Ramakien) হিন্দু মহাকাব্য রামায়ণ থেকে প্রাপ্ত। আরো দেখুনঃ ফেসবুকের দুঃসময়ে মার্ক জুকারবার্গ ভারতের যে মন্দিরটি পরিদর্শন করেছিলেন
যদিও থাইল্যান্ডে দীর্ঘ খেমার সাম্রাজ্যের শাসনকাল অনেক আগেই শেষ হয়েছে তবুও অধিকাংশ মন্দিরে এখনো বৌদ্ধ মূর্তির পাশাপাশি হিন্দু মূর্তি রয়েছে। বৌদ্ধধর্ম আব্রাহামিক ধর্মের মতো নয় যা একেশ্বরবাদে কঠোর এবং সেগুলো ধ্বংস করে দিবে।থাইল্যান্ডের হিন্দু অতীত দীর্ঘ কাল ধরে থাই সংস্কৃতির সাথে মিশে আছে। আপনি থাইল্যান্ডের অধিকাংশ মন্দিরে হিন্দু দেবতা গণেশের একটি মূর্তি দেখতে পাবেন যাকে থাইল্যান্ডবাসী ফরা পিকনেট (Phra Pikanet) হিসাবে ডাকে। থাইল্যান্ডের মানুষ সাধারণত ফরা পিকনেট (Phra Picanet) এর পুজা করে না, কিন্তু নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে করে। উদাহরণস্বরূপ দেবতা গণেশকে বিপদ নাশকারী হিসেবে দেখা হয় এবং শিল্পকর্মের অনুরাগী হিসাবে চিত্রিত করা হয়।তাই শিল্পী বা যারা নতুন ব্যবসা শুরু করেন তারা গণেশ পুজার মাধ্যমে নতুন ব্যবসা চালু করেন। গণেশের পাশাপাশি শিবের প্রতিমা (থাই ভাষায় ফেরা ইসুয়ান/Phra Isuan), ব্রহ্ম (থাই ভাষায় ফরা ফ্রোম/Phra Phrom), ইন্দ্র (থাই ভাষায় ফেরা ইন/Phra In) এবং বিষ্ণুর (থাই ভাষায় ফরা নারাই/Phra Narai)প্রতিমা দেখতে পাওয়া যায়। হিন্দু দেবতারা বুদ্ধের মতো একই মর্যাদা বা উপাসনার স্তরে না থাকলেও খেমার রাজারা খেমার সাম্রাজ্য ছেড়ে যাওয়ার শত শত বছর পরও তারা (হিন্দু দেবতারা) থাই সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ দিক।বুদ্ধের পাশাপাশি হিন্দু দেবদেবীরা থাইল্যান্ডে পুজিত হন। আরো দেখুনঃ ঘুরে আসুন সীতা মাতার মন্দির, নেপাল
Shiva Temple in Ramintra Soi, Bangkok,Thailand@Walk With Ajay
কোথায় তাদের দেখা যাবে
থাইল্যান্ডের হিন্দু প্রতিমাগুলো সারা দেশে দেখা যায়, কিন্তু কয়েকটি উল্লেখযোগ্য প্রতিমা রয়েছে যা খুবই জনপ্রিয় আকর্ষণ।সুবর্ণভূমি বিমানবন্দর এবং ব্যাংককের গ্র্যান্ড প্রাসাদটিতে হিন্দু দেবতাদের প্রতিমা রয়েছে, যা ইয়াক (yak) নামেও পরিচিত।ব্যাংকক এর ইরায়ান মন্দিরে (Erawan Shrine) ছোট সোনালি আকর্ষণীয় ব্রম্মার প্রতিমা আছে যেখানে মুসলিম সন্ত্রাসী হামলা হয়েছিল। ব্যাংকক এর বাইরে চৈচেনসো প্রদেশে (Chachoensao Province) গণেশের বেশ কয়েকটি বিশাল প্রতিমার আবাসস্থল। যদিও দেশের অন্যান্য মন্দিরগুলিতে হিন্দু দেবদেবীর তুলনামূলক ছোট কিন্তু সুন্দর প্রতিমা দেখা যায়। আরো দেখুনঃ ভারতের বাইরে দেখার মতো ৩২টি মন্দির
Koh Samui, Thailand এ অবস্থিত মা দুর্গা। @ Picfair
মোট কথা থাইল্যান্ডের মন্দিরগুলোতে বৌদ্ধ প্রতিমার পাশাপাশি হিন্দু দেবদেবীর প্রতিমা এতো বেশি যে সেগুলো হিন্দু মন্দির না বৌদ্ধ মন্দির তা বুঝে ওঠা কষ্টকর। থাইল্যান্ডের একটি হিন্দু অতীত থাকার কারণে তারা সেই পুরানো ঐতিহ্য মুছে দেয়নি। বরং বুদ্ধের পাশাপাশি তারা হিন্দু দেবদেবীদের মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছে।
দারুন একটি প্রতিবেদন করেছেনঅনেক কিছু জানলাম। । আসলে আমাদেরকে আমাদের গর্ব জানতে দেয়া হয়না।
ReplyDelete