বাঙালির ইতিহাসে যে অল্প কয়েকজন নারী উজ্জ্বল হয়ে আছেন তাদের মধ্যে বেগম রোকেয়া বা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার এর নাম অন্যতম।শিক্ষা বিস্তারে বেগম রোকেয়ার অবদানের কথা স্বরণীয়। অন্য দিকে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ছিলেন বিপ্লবী শহীদ। কিন্তু কারো নাম সব সময় থেকে যায় অগোচরে।
বলছি এমন একজন নারীর কথা যিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রী। তিনি হলেন লীলা নাগ (ওরপে লীলা রায়)।নারী জাগরণে লীলা রায়ের অবদান অপরিসীম।
লীলা নাগ ১৯০০ সালের ২রা অক্টোবর আসামের গোয়ালপাড়ায় ( বর্তমান সিলেটে) জন্মগ্রহণ করেন।তার সময়ে আমাদের সমাজে মেয়েদের লেখাপড়া করা সহজ ছিল না। তাঁর ছাত্র জীবন শুরু হয় ঢাকার ইডেন স্কুলে। ১৯২১ সালে তিনি কলকাতার বেথুন কলেজ থেকে বি.এ পাশ করেন। পরীক্ষায় তিনি মেয়েদের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেন এবং পদ্মাবতী স্বর্ণ পদক লাভ করেন। ১৯২১ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যাল়য়ে ইংরেজি বিষয়ে এমএ ভর্তি হন। ১৯২৩ সালে তিনি দ্বিতীয় বিভাগে এমএ ডিগ্রী লাভ করেন। তখনকার পরিবেশে সহশিক্ষার
কোনও ব্যবস্থা ছিল। অর্থাৎ তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের পড়ার সুযোগ ছিল না। কিন্তু লীলা নাগের মেধা ও আকাঙ্খা বিচার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভাইস চান্সেলর ডঃ হার্টস তাকে পড়ার বিশেষ অনুমতি প্রদান করেন। তিনি শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রী ছিলেন না।তিনিই ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম এমএ ডিগ্রীধারী।লীলা নাগ ঢাকা কলেজে পড়াকালীন তার এক ক্লাস উপরের ছাত্র ছিলেন সাহিত্যিক কাজী মোতাহার হোসেন ।লীলা রায় সম্পর্কে তিনি তার স্মৃতিকথা নামক প্রবন্ধ সংকলনে লেখেন, "এঁর মত সমাজ-সেবিকা ও মর্যাদাময়ী নারী আর দেখি নাই। এঁর থিওরী হল, নারীদেরও উপার্জনশীলা হতে হবে, নইলে কখনো তারা পুরুষের কাছে মর্যাদা পাবে না। তাই তিনি মেয়েদের রুমাল, টেবলক্লথ প্রভৃতির উপর সুন্দর নক্সা এঁকে বিক্রয়ের ব্যবস্থা করেছিলেন। এই সব বিক্রি করে তিনি মেয়েদের একটা উপার্জনের পন্থা উন্মুক্ত করে দেন।"
বাঙালি নারীদের মধ্যে শিক্ষা বিস্তারে,নারীদের এগিয়ে নিয়ে যেতে তিনি বিশেষ ভুমিকা পালন করেছেন।ঐ সময়ে তিনি নিজ উদ্যোগে অনেক গুলো স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ঢাকার আরমানীটোলা বালিকা বিদ্যালয়, দীপালী হাই স্কুল (বর্তমান কামরুন্নেসা গার্লস হাই স্কুল) এবং শেরে বাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয় (তৎকালীন নারীশিক্ষা মন্দির) প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে লীলা নাগ বিয়ে করেন বিপ্লবী অমিত রায়কে। বিয়ের পর তার নাম হয় শ্রীমতি লীলাবতী রায়। দেশভাগের পর লীলা নাগ কলকাতায় চলে যান এবং সেখানেও কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।
লীলা রায় ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের একজন নেত্রী ছিলেন ! এজন্য কয়েকবার তাঁকে কারা বরণ করতে হয়। তিনি ছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর একজন ঘনিষ্ঠ সহকারী। তিনি বাঙালি মেয়েদের সামনের দিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য মহিলা সমাজে মুখপত্র হিসেবে “জয়শ্রী” নামে একটি পত্রিকা বের করেন। লীলা রায় ছবি আঁকতেন এবং গান ও সেতার বাজাতে জানতেন। নোয়াখালী দাঙ্গার সময় লীলা রায় আবির্ভুত হন ত্রাণকর্তা হিসেবে। নোয়াখালী দাঙ্গা ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় দাঙ্গার একটি। তখন গ্রামের পর গ্রাম জুড়ে হিন্দুদেরকে জোর করে ইসলামে ধর্মান্তরিত করার মত ঘৃণ্য পাশবিকতায় উন্মত্ত হয়ে ওঠে মুসলিমরা।হিন্দু পুরুষদেরকে মাথায় টুপি এবং মুখে দাঁড়ি রাখা বাধ্যতামুলক করা হয়। মহিলাদের হাতের শাঁখা ভেঙ্গে ফেলে এবং কপালের সিঁদুর মুছে দেয় মুসলিমরা। তাদেরকে কলেমা পড়ে ইসলামে ধর্মান্তকরন করা হয়। সেখানে হিন্দু মহিলাদের মাটিতে চিৎ করে শুইয়ে মুসলিম লীগের গুণ্ডারা পায়ের বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে সিঁথির সিঁদুর মুছে দিয়ে হাতের শাঁখা ভেঙ্গে তাদের স্বামী ও পুত্র ও শিশু কন্যাদের হত্যা করে ওই হিন্দু মহিলাদের জোর করে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করে বিয়ে করত। ১৯৪৬ সালের অক্টোবর থেকে নভেম্বর এ মাত্র ২ মাসে মুসলিমরা হত্যা করে ১০,০০০ হিন্দু নারী-পুরুষ ও শিশুকে।তখন দাঙ্গা প্রশমনে গান্ধীজি কয়েক মাস নোয়াখালীতে অতিবাহিত করেন।কিন্তু তাতে কোন কাজ হয়েছিল বলে মনে হয় না।এম এ খানের মতে, কমপক্ষে ৯৫% হিন্দুকে জোরপূর্বক মুসলমান বানানো হয়। অক্টোবরে All India Women’s Conference এর সভায় কিডনাপকৃত হিন্দু মেয়েদের উদ্ধারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আর তাতে অংশ নেন ময়িহসী নারী লীলা রায় ! তিনি বৃহত্তর নোয়াখালীর বিভিন্ন এলাকায় ৯০ মাইল পথ পায়ে হেটে উদ্ধার করেন ১৩০৭ জন হিন্দু মেয়ে ! জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত হিন্দু নারীদের উদ্ধার করতে তিনি দিপালী সংঘ নামে একটি প্রতিষ্ঠান খোলেন। সেই সংঘ থেকে হিন্দু মেয়েদের বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করতেন। তিনি ছিলেন একজন বাঙালি সাংবাদিক, জনহিতৈষী এবং রাজনৈতিক আন্দোলনে সক্রিয় ব্যক্তিত্ব। অথচ আজো কেউ তাকে স্মরণ করে না!এই মহিয়সী নারী ১৯৭০ সালের ১১ই জুন ভারতে পরলোকগমন করেন।আশ্চর্য্যের বিষয় হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেকের নামে হল থাকলেও এই কৃতী ছাত্রীর নামে নেই কোন স্মরণীয় কিছু। আসুন আমরা এই মহিয়সী নারী লীলা রায় কে সন্মানের সাথে স্মরণ করি।
লীলা নাগ ১৯০০ সালের ২রা অক্টোবর আসামের গোয়ালপাড়ায় ( বর্তমান সিলেটে) জন্মগ্রহণ করেন।তার সময়ে আমাদের সমাজে মেয়েদের লেখাপড়া করা সহজ ছিল না। তাঁর ছাত্র জীবন শুরু হয় ঢাকার ইডেন স্কুলে। ১৯২১ সালে তিনি কলকাতার বেথুন কলেজ থেকে বি.এ পাশ করেন। পরীক্ষায় তিনি মেয়েদের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেন এবং পদ্মাবতী স্বর্ণ পদক লাভ করেন। ১৯২১ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যাল়য়ে ইংরেজি বিষয়ে এমএ ভর্তি হন। ১৯২৩ সালে তিনি দ্বিতীয় বিভাগে এমএ ডিগ্রী লাভ করেন। তখনকার পরিবেশে সহশিক্ষার
কোনও ব্যবস্থা ছিল। অর্থাৎ তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের পড়ার সুযোগ ছিল না। কিন্তু লীলা নাগের মেধা ও আকাঙ্খা বিচার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভাইস চান্সেলর ডঃ হার্টস তাকে পড়ার বিশেষ অনুমতি প্রদান করেন। তিনি শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রী ছিলেন না।তিনিই ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম এমএ ডিগ্রীধারী।লীলা নাগ ঢাকা কলেজে পড়াকালীন তার এক ক্লাস উপরের ছাত্র ছিলেন সাহিত্যিক কাজী মোতাহার হোসেন ।লীলা রায় সম্পর্কে তিনি তার স্মৃতিকথা নামক প্রবন্ধ সংকলনে লেখেন, "এঁর মত সমাজ-সেবিকা ও মর্যাদাময়ী নারী আর দেখি নাই। এঁর থিওরী হল, নারীদেরও উপার্জনশীলা হতে হবে, নইলে কখনো তারা পুরুষের কাছে মর্যাদা পাবে না। তাই তিনি মেয়েদের রুমাল, টেবলক্লথ প্রভৃতির উপর সুন্দর নক্সা এঁকে বিক্রয়ের ব্যবস্থা করেছিলেন। এই সব বিক্রি করে তিনি মেয়েদের একটা উপার্জনের পন্থা উন্মুক্ত করে দেন।"
বাঙালি নারীদের মধ্যে শিক্ষা বিস্তারে,নারীদের এগিয়ে নিয়ে যেতে তিনি বিশেষ ভুমিকা পালন করেছেন।ঐ সময়ে তিনি নিজ উদ্যোগে অনেক গুলো স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ঢাকার আরমানীটোলা বালিকা বিদ্যালয়, দীপালী হাই স্কুল (বর্তমান কামরুন্নেসা গার্লস হাই স্কুল) এবং শেরে বাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয় (তৎকালীন নারীশিক্ষা মন্দির) প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে লীলা নাগ বিয়ে করেন বিপ্লবী অমিত রায়কে। বিয়ের পর তার নাম হয় শ্রীমতি লীলাবতী রায়। দেশভাগের পর লীলা নাগ কলকাতায় চলে যান এবং সেখানেও কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।
লীলা রায় ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের একজন নেত্রী ছিলেন ! এজন্য কয়েকবার তাঁকে কারা বরণ করতে হয়। তিনি ছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর একজন ঘনিষ্ঠ সহকারী। তিনি বাঙালি মেয়েদের সামনের দিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য মহিলা সমাজে মুখপত্র হিসেবে “জয়শ্রী” নামে একটি পত্রিকা বের করেন। লীলা রায় ছবি আঁকতেন এবং গান ও সেতার বাজাতে জানতেন। নোয়াখালী দাঙ্গার সময় লীলা রায় আবির্ভুত হন ত্রাণকর্তা হিসেবে। নোয়াখালী দাঙ্গা ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় দাঙ্গার একটি। তখন গ্রামের পর গ্রাম জুড়ে হিন্দুদেরকে জোর করে ইসলামে ধর্মান্তরিত করার মত ঘৃণ্য পাশবিকতায় উন্মত্ত হয়ে ওঠে মুসলিমরা।হিন্দু পুরুষদেরকে মাথায় টুপি এবং মুখে দাঁড়ি রাখা বাধ্যতামুলক করা হয়। মহিলাদের হাতের শাঁখা ভেঙ্গে ফেলে এবং কপালের সিঁদুর মুছে দেয় মুসলিমরা। তাদেরকে কলেমা পড়ে ইসলামে ধর্মান্তকরন করা হয়। সেখানে হিন্দু মহিলাদের মাটিতে চিৎ করে শুইয়ে মুসলিম লীগের গুণ্ডারা পায়ের বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে সিঁথির সিঁদুর মুছে দিয়ে হাতের শাঁখা ভেঙ্গে তাদের স্বামী ও পুত্র ও শিশু কন্যাদের হত্যা করে ওই হিন্দু মহিলাদের জোর করে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করে বিয়ে করত। ১৯৪৬ সালের অক্টোবর থেকে নভেম্বর এ মাত্র ২ মাসে মুসলিমরা হত্যা করে ১০,০০০ হিন্দু নারী-পুরুষ ও শিশুকে।তখন দাঙ্গা প্রশমনে গান্ধীজি কয়েক মাস নোয়াখালীতে অতিবাহিত করেন।কিন্তু তাতে কোন কাজ হয়েছিল বলে মনে হয় না।এম এ খানের মতে, কমপক্ষে ৯৫% হিন্দুকে জোরপূর্বক মুসলমান বানানো হয়। অক্টোবরে All India Women’s Conference এর সভায় কিডনাপকৃত হিন্দু মেয়েদের উদ্ধারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আর তাতে অংশ নেন ময়িহসী নারী লীলা রায় ! তিনি বৃহত্তর নোয়াখালীর বিভিন্ন এলাকায় ৯০ মাইল পথ পায়ে হেটে উদ্ধার করেন ১৩০৭ জন হিন্দু মেয়ে ! জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত হিন্দু নারীদের উদ্ধার করতে তিনি দিপালী সংঘ নামে একটি প্রতিষ্ঠান খোলেন। সেই সংঘ থেকে হিন্দু মেয়েদের বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করতেন। তিনি ছিলেন একজন বাঙালি সাংবাদিক, জনহিতৈষী এবং রাজনৈতিক আন্দোলনে সক্রিয় ব্যক্তিত্ব। অথচ আজো কেউ তাকে স্মরণ করে না!এই মহিয়সী নারী ১৯৭০ সালের ১১ই জুন ভারতে পরলোকগমন করেন।আশ্চর্য্যের বিষয় হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেকের নামে হল থাকলেও এই কৃতী ছাত্রীর নামে নেই কোন স্মরণীয় কিছু। আসুন আমরা এই মহিয়সী নারী লীলা রায় কে সন্মানের সাথে স্মরণ করি।
Shraddha o Pranam janai .
ReplyDeleteধন্যবাদ।
Deleteধন্যবাদ সত্যটুকু তোলে ধরার জন্য
ReplyDeleteBritish Ahmader janna Ashirbad Sharup
ReplyDeletePunnaudder hinduder darai shambhab hotona
ভালো নিউজ
ReplyDeleteNice News
ReplyDelete