মন্দির গুড়িয়ে দিয়েও ইতিহাসের মহানায়ক যিনি - UHC বাংলা

UHC বাংলা

...মুক্ত চিন্তায় বিশ্বাসী একটি গ্লোবাল বাংলা প্লাটফর্ম!

ব্রেকিং নিউজ

Home Top Ad

Thursday, May 16, 2019

মন্দির গুড়িয়ে দিয়েও ইতিহাসের মহানায়ক যিনি

@www.indiadivine.org



পৃথিবীর ইতিহাসে মহানায়ক হন তারাই যারা সমালোচনার উর্ধে। কিন্তু বাংলায় তার কিছু ব্যতিক্রম আছে। আজ শুধু একটি বিষয় তুলে ধরবো। আসুন ইতিহাসের প্রথম দিকে যায়। রমনা কালী মন্দির ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে বিখ্যাত হিন্দু মন্দিরসমূহের মধ্যে অন্যতম ছিল। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। এটি প্রায় এক হাজার বছরেরও পুরাতন বলে বিশ্বাস করা হয় কিন্তু ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি আবার নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল ।বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার রমনা পার্কের (যার বর্তমান নাম সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বহির্ভাগে অবস্থিত।বর্তমানে বাংলার সংস্কৃতিতে এ মন্দিরের উল্লেখ্য ভূমিকা আছে। জনশ্রুতি, প্রায় ৫০০ বছর আগে বদরীনাথের যোশীমঠ থেকে গোপালগিরি নামে এক উচ্চমার্গের সন্ন্যাসী প্রথমে ঢাকায় এসে সাধন-ভজনের জন্য উপযুক্ত একটি আখড়া গড়ে তোলেন। সেখানেই আরও ২০০ বছর পরে মূল রমনা কালীমন্দিরটি নির্মাণ করেন আর এক বড় সাধু হরিচরণ গিরি। তবে পরবর্তী সময়ে এই মন্দিরের প্রধান সংস্কারকার্য ভাওয়ালের ভক্তিমতী ও দানশীলা রানি বিলাসমণি দেবীর আমলেই হয়। ১৯৭১ সালের ২৬ ও ২৭ মার্চ। এই দুটো দিন রমনা কালীমন্দিরের পবিত্র ভূমি ঘিরে পাকিস্তানি সেনারা যে বিভীষিকার রাজত্ব তৈরি করেছিল তার করুণ কাহিনি ইতিহাসের পাতায় চিরদিন লেখা থাকবে। এক তীর্থভূমি রাতারাতি পরিণত হয়েছিল বধ্যভূমিতে। রমনা কালীমন্দিরের অধ্যক্ষ স্বামী পরমানন্দ গিরি সহ সেখানে উপস্থিত প্রায় ১০০ ( মতান্তরে ৫০০) জন নারী ও পুরুষকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল পাক সেনারা। শিশুরাও রেহাই পায়নি। এই হত্যাকাণ্ডের সময় রমনা কালীমন্দির ও মা আনন্দময়ী আশ্রম দাউ দাউ করে জ্বলেছিল। রমনা কালীমন্দিরের চূড়া ছিল ১২০ ফুট, যা বহুদূর থেকে দেখা যেত। সেটিও ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয় ওই বর্বর সেনারা। ২৭ শে মার্চ দিনটি বাংলাদেশের হিন্দুদের জন্য একটি কালো দিবস। ১৯৭১ সালের (২৬শে মার্চ গভীর রাতে) এই দিনে পাক বাহিনী রমনা কালী মন্দির কে বুলডোজার দিয়ে
গুড়িয়ে দেয়! মন্দিরটির টাওয়ার এতো উঁচু(১২০ ফুট) ছিল যে এটা এসময় ঢাকার সবচেয়ে উঁচু বিল্ডিং ছিল। নাম কালী মন্দির হলেও এর সাথে ছিল দূর্গা মন্দির, মা আনন্দময়ীর মন্দির, রাধা-কৃষ্ণ মন্দির সহ আরো কয়েকটি মন্দির।মন্দিরটি শুধু গুড়িয়ে দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি হায়েনারা। 

এই মন্দিরেই ৫০০ ভক্তকে জীবন্ত পুড়ানো হয়।
সংক্ষিপ্তভাবে পাক বাহিনীর বর্বরতার বর্ণনা  পাওয়া যায় এভাবে : কমলা  রায় তখন রমনা কালী মন্দির এবং মা আনন্দমোয়ী আশ্রমের প্রাঙ্গনে বসবাস করতেন। তিনি কমিশনকে বলেন যে পাকিস্তানী আক্রমণকারীরা সব দিক থেকে ঘিরে ফেলে, নারীরা ত্রস্ত ও ভীত হয়ে পড়ে তাদের জীবনের জন্য।  পাক সেনারা নারীদের কপাল   থেকে সিন্দুর মুছে ফেলে এবং তাদের শাঁখা ভেঙে দেয় । পুরুষদের এবং মহিলাদের আলাদাভাবে দাড় করানো হয় । তারপর  তাদের গুলি করা হয় এবং তারা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে । গুলির পর তাদের মধ্যে কয়েকজন অর্ধমৃত  ছিলেন এবং জলের জন্য চেঁচিয়ে উঠছিলেন । পাকিস্তানি সেনারা  মৃতদেহ সংগ্রহ করে পাশবর্তী  বাঁশের বেড়ায়  নিক্ষেপ করে ও আরো বাশ সংগ্রহ করে  এবং আগুনে পুড়িয়ে দেয়। পাকিস্তানী সৈন্যরা কয়েকটি শিশুকে জীবন্ত আগুনে পুড়িয়ে  যখন তারা মৃতদেহের পাশে  চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছিল  এবং মারাত্মক ভয়ে চিৎকার করছিলো ।

লক্ষ্মী রানী ঠাকুর তার  বাবাকে  হারিয়েছেন  ! তিনি বলেন, তার বাবা কিশোরী ঠাকুর ২৫ শে মার্চ রাতে তার সাথে দেখা করতে এসেছিলেন। কিশোরী বাবু ময়মনসিংহের মুক্তাগাছাতে বাস করতেন। ঢাকায় লক্ষ্মী রানী বিয়ে করেছিলেন এবং তিনি রমনা কালী মন্দিরে তার স্বামীর সাথে বসবাস করেছিলেন। পাকিস্তানিরা তার বাড়ির কাছ থেকে কিশোরী বাবুকে ধরে নিয়েছিল, তাকে লাইনে দাঁড়িয়ে হত্যা  করেছিল। তারপর তার মৃতদেহ আগুনে নিক্ষেপ করা হয়। দৈনিক ইত্তেফাকের উপ-সম্পাদক আহসানুলুল্লাহ, কমিশনের কাছে তার সাক্ষ্যে উল্লেখ করেছেন যে রমনা মন্দির ধ্বংসের তিন দিন পর তিনি সেখানে এসেছিলেন এবং পুড়িয়ে মারা মানব দেহের পাশে ১৪ টি মৃতদেহ দেখেছিলেন। সেই দেহগুলো ফুলে উঠেছিল  ও পচা  গন্ধ বের হচ্চিল। ধ্বংসপ্রাপ্ত মন্দির ও আশ্রমের মধ্যে আরও ১০ টি মৃতদেহ পাওয়া যায়।
প্রত্যক্ষদর্শী আবদুন আলী ফকির যিনি ছিলেন  শাহবাগ মসজিদের খাদেম (রমনা কালী মন্দিরের কাছাকাছি  অবস্থিত) তিনি বলেন, পাকিস্তানি আক্রমণকারী বাহিনী সন্ত্রাসের পর, রমনা কালী মন্দির এবং মা আনন্দময়ী আশ্রমের প্রত্যেককে "পাকিস্তান জিন্দাবাদ"  এবং "লা ইলাহা ইল্লালাহ" বলতে বাধ্য করা হয়েছিল। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা সমস্ত পুরুষ ও মহিলা ঐ শব্দগুলিকে ঐক্যবদ্ধ কণ্ঠে উচ্চারণ করে এবং তার পর তাদের গুলি করে হত্যা  করা হয় ।

বলতে পারেন ওটা তো পাকিস্তানিরা করে গেছে। হ্যা, ওটা পাকিস্তানিরা করে গেছে!বাংলাদেশ কম কিসে ? স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের হিন্দুরা স্বপ্ন দেখে -
"দেশ তো এখন স্বাধীন"~ ধুলার সাথে মিশে যাওয়া মন্দিরটি আবার মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। কিন্তু সেই স্বপ্নে প্রথম ছুরি মারেন আওয়ামীলীগ প্রধান ও বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি  শেখ মুজিবুর রহমান !
 আরো দেখুন : বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর হামলার বিচার হয়না কেন ?
সবার সমান অধিকারের উদ্দেশ্যে দেশ স্বাধীন হলেও মুজিব সরকার ১৯৭২ সালে রমনা কালী মন্দিরের যে শেষ ছোট্ট বিল্ডিংটি ছিল তা বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয় এবং এই মন্দিরের জায়গা শেখ সাহেব ঢাকা ক্লাবের নিকট হস্তান্তর করেন। 

Photo Courtesy: Wikipedia

[রামু, উখিয়া ও পটিয়ায় বৌদ্ধ বসতিতে হামলা অগ্নিসংযোগ ]
ফলে বাংলাদেশের হিন্দুরা শুধু মন্দির হারালো না, হারালো মন্দিরের জায়গাটিও যেখানে তারা হাজার বছর ধরে পূজা-অর্চনা করে আসছিলো। (রেফ: দৈনিক বাংলা, ডিসেম্বর ২৭, ১৯৭২) আওয়ামী সরকার এখানে কোন ধরণের পূজা করা সম্পুর্ন্ন নিষিদ্ধ করে। এই মন্দিরের বিশাল জায়গায় গড়ে তোলা হয় ঢাকা ক্লাব ও রমনা পার্ক। আজকের রমনা পার্ক মূলত রমনা কালী মন্দিরের অরিজিনাল স্পট। ১৯৭১ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত এই মন্দিরে কোন পূজা হয়নি। কিন্তু হিন্দুদের আন্দোলন থেকে থাকেনি।
আরো দেখুনঃ হিন্দু নির্যাতনে আওয়ামীলীগের লাভ-ক্ষতির হিসাব এবং হিন্দুদের করণীয়  

 বাংলাদেশের হিন্দুরা রাজপথে আন্দোলন ও কোর্টে যায়। কোর্ট ১৯৮২ সালে একবারের জন্য অস্থায়ী ভাবে শুধু মাত্র কালী পূজা করার অনুমতি দেয়। ২০০০ সালে দূর্গা পূজার সময় আওয়ামীলীগ প্রধান শেখ হাসিনা মন্দির পুনঃনির্মাণে হিন্দুদের দাবির সাথে একমত পোষণ করেন।২০০৪ সালে এখানে সেমি-পারমানেন্ট ভাবে একটি কালী প্রতিমা স্থাপন করা হয় এবং কালী পূজা করা হয়।
  আরো দেখুনঃ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের তাণ্ডবে চার জেলায় সংখ্যালঘুদের বাড়িতে হামলা, আগুন, লুট

 ২০০৬ সালে বিএনপি সরকার প্রধান বেগম খালেদা জিয়া মন্দিরটি পুনঃনির্মাণের ঘোষণা দেন। কিন্তু হিন্দুরা তাতে সন্তুষ্ট হতে পারেনি। কারণ মন্দিরটি মূল ফটক হতে সরিয়ে পাশ্বর্তী সৌরওয়ার্দী উদ্যানে নেয়া হয়। তার পর থেকে মন্দিরটি সরওয়ার্দী উদ্যানে আংশিকভাবে পুনঃনির্মাণ করা হয় এবং এখানে নিয়মিত পূজা হচ্ছে। 
 আরো দেখুনঃ রসরাজ স্কুলেই যায়নি তার পক্ষে এ কাজ সম্ভব নয় 


আরো দেখুনঃ নাসিরনগরে হিন্দুদের উপর হামলায় লীগের মন্ত্রী জড়িত

 আরো দেখুনঃ ফেসবুকে কথিত স্ট্যাটাস দেওয়া টিটু রায় ‘নিরক্ষর’, এলাকায় নেই ৭ বছর
রেফঃ উইকি, দৈনিক বাংলা
বিস্তারিত জানতে: উইকি দেখুন  
পাকিস্থানী সেনাদের কথা বাদ দিলাম। স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে শেখ মুজিবের দায়িক্ত ছিল রমনা কালী মন্দির পুনরায় নির্মাণ করা। তিনি তা না করে উল্টে পাকিস্তানিদের দেখানো পথে হাঁটলেন। তিনি বাকি মন্দিরটুকুও বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেন। বারবি মসজিদ ভাঙ্গায় ইনভল্ভ থাকার অভিযোগে যদি তীর নরেন্দ্র মোদীর ( যদিও কোর্ট সে অভিযোগ খালাস করেছে ) দিকে বিঁধে তবে কেন মুজিবের দিকে নয় ? মুজিবের ১৯৭২-৭৫ সাল তো বটেই, এমনকি ২০০০ সাল পর্যন্ত পুজা নিষিদ্ধ ছিল এই মন্দিরে।  যে ব্যক্তি স্বাধীন বাংলাদেশে ঢাকার রমনা কালী মন্দিরটি বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দিলেন, এর অধিকাংশ সম্পত্তি ঢাকা ক্লাবের নামে লিখে দিলেন  (যা আজো উদ্ধার হয়নি ), এই মন্দিরে সকল ধরণের পূজা নিষিদ্ধ করলেন, তাকে কিনা আমরা বানালাম ইতিহাসের সেরা নায়ক - শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ বাঙালী ! এটা কি লজ্জার নয় ?

1 comment:

  1. তথ্যগুলি কতটা সত্য ? সত্য হলে আমরা নতুন প্রজন্ম কেন এসব ইতিহাস জানিনা?

    ReplyDelete

পোস্টটি ভালো লাগলে কমেন্ট করুন। আপনার কোন তথ্য সংরক্ষণ বা প্রকাশ করা হবে না। আপনি Anonymous বা পরিচয় গোপন করেও কমেন্ট করতে পারেন।

অন্যান্য

Post Bottom Ad

আকর্ষণীয় পোস্ট

code-box