সংস্কার অনুষ্ঠান সমূহ
বিয়েতে যে এতো আচার প্রথা তার কি কোনো দরকার আছে? কন্যাদান কি অপমানকর নয়? মেয়ে কি দানের বস্তু? গায়ে-হলুদ যজ্ঞ অর্থহীন বর্তমান যুগে। এসবের কি প্রয়োজন আছে?
●●●আপনার আপত্তি থাকলে রেজিস্ট্রি করুন ।
মুশকিল হলো, ধর্ম-ডাক্তারি-রাজনীতি এই তিনটি বিষয়ে সবাই পন্ডিত,স্পেসালিস্ট,কিছু জানুক আর
নাই জানুক। তবে একটা খবর আপনাকে দিই।বিখ্যাত কমুনিস্ট নেতা নম্বুদ্রিপদ
কেরালায় তার মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন নম্বুদ্রি-ব্রাহ্মণদের শাস্ত্রীয়
রীতিনীতি মেনে। (শঙ্করাচার্যও ছিলেন এই কুলীন ব্রাহ্মণ ধারার।)
বিয়েতে আচার-অনুষ্ঠান আসামে একরকম, কেরালায় আরেক রকম, গুজরাটে অন্য ধরণের।
তবে সর্বত্র তিনটি প্রথা — যজ্ঞ, কন্যাদান, সপ্তপদী — রয়েছে। এগুলি বৈদিক,
অন্যান্য প্রথা স্থানীয়।উদার প্রকৃতির জন্য হিন্দুধর্ম বেদের সাথে
গণধর্মগুলিকেও স্বীকার করেছে, ধ্বংস করেনি।ফলে বিযেতেও এই সমন্বয় দেখা যায়।
সব নিয়ে বিশদ আলোচনার বদলে শুধু বৈদিক 3টি প্রথা নিয়ে বলা যাক সংক্ষেপে।
যজ্ঞ : আগুনকে পবিত্র মনে করা হয় কারণ এটি সব ধাতুকে পুড়িয়ে শুদ্ধ করে ও আগুনের গতি সবসময় উপরদিকে। অর্থাত প্রথমেই মনে করিয়ে দেয়া হয় যে বিয়েটা এক পবিত্র বন্ধন। বর-বৌ মন্ত্র বলে “যদিদং হৃদয়ং মম…” (অর্থাত, আমার হৃদয় তোমার হোক …)। বিয়ের ভিত্তি যে হৃদয়ের মিলন, সেটা স্পষ্ট করা হয়। বর-কনে মন্ত্র পড়েপড়ে যজ্ঞের আগুনে ঘি আহুতি দেয় বারবার। কেন? এই যে সম্পর্ক হতে চলেছে একে সঞ্জীবিত (nurture) করে যেতে হবে জীবনের পথে। নাহলে এটা যান্ত্রিক হয়ে পড়বে।
কন্যাদান : দান কাকে করা হয়? অভাবী মানুষকে।
গরীবকে পয়সা দেয়া, ব্স্ত্রহীনকে কাপড় দেয়া,
নিরক্ষরকে শিক্ষা দেয়া। কন্যাদান কেন? পুরুষ অনেক কিছুই শিখেছে, কিন্তু ঘর
বাঁধতে শেখেনি।কেন? সে তো বাঁশ-খড় বা ইঁট-সিমেন্ট দিয়ে বাড়ি তৈরি করতে
পারে! এখানে মুনি বলেছেন “গৃহিণী গৃহং উচ্যতে”(স্ত্রীই প্রকৃত ঘর)। স্বামী
উপার্জন করে কিন্তু সংসার সামলায় স্ত্রী।
বরের এই অভাব মেটাবার জন্য কন্যা আসছে তার শক্তি নিয়ে।শিক্ষা যেমন নিরক্ষরকে শক্তি দেয়
তেমনি স্ত্রী শক্তি দেবে স্বামীকে, এ-কথাই মেয়ের বাবা বলছেন কন্যাদানের মাধ্যমে।
আর এজন্যই স্ত্রীর স্থান স্বামীর বাঁ দিকে। স্বামীর
ডান হাত শক্ত, ঐ হাত দিয়ে সে শিকার করে, অর্থ
উপার্জন করে, যুদ্ধ করে। কিন্তু তার বাঁ হাত দুর্বল। স্ত্রী ঐদিককে শক্তি
দেবে বলে স্ত্রীর স্থান স্বামীর বাঁ দিকে।
সপ্তপদী :
এতক্ষণ বসেবসে মন্ত্র পড়ার পর এবার একসাথে সাত পা চলা। অর্থাত এখন থেকে যৌথ
জীবন, একসাথে পথ চলা। আগুনকে ঘিরে কারণ জীবনে অনেক রকম পরিস্থিতি বহু
বাঁধা আসবে, কিন্তু এর মোকাবিলা করতে হবে দুজনে মিলে।
সাত বার কেন? বাইরে 7 ভুবন (ভাল-মন্দ নানান
পরিস্থিতি) আর ভেতরে 7 চ্ক্র (মনের নানা অবস্থা)। বাইরে-ভেতরে যাই হোক,
স্বামী-স্ত্রীকে তার সমাধান করতে হবে একসঙ্গে — এটাই বলা হচ্ছে ।
সুখে-দু:খে একসাথে পথ চলার অঙ্গীকার ।
বৌ-ভাত : নববধূ পতিগৃহে এসে রান্না করে খাওয়ায় স্বামীর আত্মিয়-স্বজনকে। এর তাতপর্য —
বধূকে বলা হচ্ছে যে শুধু নিজের সংসারের জন্য কাজ করা নয়, সমাজের কথা ভাবতে হবে। গীতায়
বলা হয়েছে, যারা শুধু নিজের জন্য রান্না করে
তারা চোর। সপ্তপদীতে যে যৌথজীবনের শুরু সেটা পরিণত হলো সমাজজীবনে।
স্বামী-স্ত্রীকে বলা হলো, কেবল নিজের পরিবারে সীমাবদ্ধ না থেকে সমাজের কথা
ভাবতে।
কার্টেসি-
●■●স্বামী সোমেশ্বরানন্দ
কপিল গুপ্ত
১৬টি সংস্কার কি কি ?
এমন কিছু কাজ যা ভবিষ্যৎ জীবনকে সুন্দর করে গড়ে তোলে এবং একজন ব্যক্তির উপর প্রভাব বিস্তার করে। সংস্কার মানুষকে পবিত্র, দোষত্রুটি মুক্ত এবং নির্মল করে। যে আচার-অনুষ্ঠান জীবনকে ধর্মীয় পরিবেশে সুন্দরভাবে গড়ে উঠতে সাহায্য করে তাই সংস্কার। প্রতিটা মানুষ চায় তার সন্তান একজন ভাল চরিত্রের মানুষ হিসাবে গড়ে উঠুক। চারপাশের পরিবেশ শিশুর চরিত্র গঠনে ভূমিকা রাখে। যেকোনো ভালো প্রভাব সুন্দর চরিত্র গঠনে সাহায্য করে। সনাতন ধর্মে ১৬টি সংস্কার আছে।এই ষোলটি সংস্কার জীবনকে উন্নত করে, খারাপ সঙ্গ থেকে রক্ষা করে এবং তাকে একজন সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলে।
১৬ টি সংস্কার হচ্ছে :
১. গর্ভদান : বিবাহের পর স্বামী-স্ত্রী
সন্তান জন্মদানের জন্য সকলের আশীর্বাদ পান। এই সংস্কার দ্বারা তারা
স্বাস্থ্যবান, মহৎ এবং উদার হৃদয়ের সন্তান প্রার্থনা করেন।
৩. সীমন্তোন্নয়ন : এটা গর্ভধারণের ষষ্ঠ বা অষ্টম মাসের শেষে করা হয় সন্তানের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য।
৪. জাতকর্ম : জন্মগ্রহণের দিন সন্তানকে জাতকর্মের মাধ্যমে পৃথিবীতে স্বাগতম জানান হয়।
৫. নামকরণ : জন্মের এগার মাসে এই সংস্কার পালন করা হয় এবং সন্তানকে একটি নাম দেওয়া হয়।
৬. নিষ্ক্রমণ : জন্মের চতুর্থ মাসে এই সংস্কার পালন করা হয়। শিশু সন্তানকে বাইরের পরিবেশে উন্মুক্ত করা হয়। যাতে সূর্যের আলো তাকে স্বাস্থ্যবান করে তোলে। দীর্ঘায়ুর জন্য প্রার্থনা করা হয়। এই সময় থেকে সন্তান প্রকৃতির কোলে প্রাকৃতিকভাবে বড় হতে থাকে।
৭. অন্নপ্রাসন : সন্তানের যখন দাঁত উঠতে থাকে সাধারণত ছয় থেকে আট মাস বয়সে এই সংস্কার পালন করা হয়। তখন থেকেই তাকে শক্ত খাবার দেওয়া হয়।
৮. চূড়াকরণ : প্রথম থেকে তৃতীয় বছর বয়সের মধ্যে এই সংস্কার পালন করা হয়। প্রথম বারের মতো মাথার সব চুল ফেলে দেওয়া হয়। সুস্বাস্থ্য এবং সুস্থ মানসিক বিকাশের জন্য প্রার্থনা করা হয়।
৯. কর্ণভেদ : তিন বছর বয়সে কান ফোরানো হয় এবং শারীরিক সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করা হয়।
১০. উপনয়ন : ৫ থেকে ৮ বছর বয়সে উপনয়নের মাধ্যমে একটি শিশু গুরু/শিক্ষকের সান্নিধ্যে আসে। গুরুর নিকট জ্ঞান, কর্ম, ভক্তিসহ বিভিন্ন নিয়মানুবর্তিতা অর্থাৎ শাস্ত্রে জীবন যাপনের যে পদ্ধতি উল্লেখ আছে তার অনুশীলন করে। ব্রহ্মচর্য জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা এবং সব রকম খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকার অভ্যাস ছাত্র জীবনেই করতে হয়। নিয়মিত পড়ালেখা এই সংস্কারের পরেই শুরু হয়।
১১. বেদারম্ভ : উপনয়ন এর পরেই এই সংস্কার পালন করা হয়। এই সময় বেদ এবং বিভিন্ন শাস্ত্র অনুসারে আধ্যাত্মিক জ্ঞান অর্জন শুরু হয়। জ্ঞানের সকল শাখায় তাকে বিচরণ করতে হয় এবং এর মাধ্যমে সে জাগতিক বিষয়ের সঙ্গে আধাত্মিক বিষয় সম্পর্কে জানতে পারে।
১২. সমাবর্তন : ২১ থেকে ২৫ বছর বয়সের মধ্যে যখন শিক্ষা গ্রহণ শেষ হয়, তখন এটি পালন করা হয়। গুরু ছাত্রকে যোগ্যতা অনুযায়ী ডিগ্রি প্রদান করেন। এরপর একজন ছাত্র আত্মনির্ভর এবং স্বাধীন জীবন যাপন করে।
১৩. বিবাহ : ব্রহ্মচর্য শেষে একজন বিয়ে করে পরবর্তী গৃহস্থ জীবনে পদার্পণ করে। একজন পুরুষ আর একজন মহিলা যারা এতদিন স্বাধীন জীবন যাপন করেছে এখন একসঙ্গে জীবনভর চলার সপথ গ্রহণ করে। বিয়ের পর সন্তান হয় এবং পরিবারের ধারা চলতে থাকে।
১৪. বানপ্রস্থ : ৫০ বছর বয়সে গৃহস্থ আশ্রম শেষে বানপ্রস্থ আশ্রম শুরু হয়। নিজের সুবিধার জন্য তিনি যে সব কাজ করতেন তার সবকিছু পরিত্যাগ করেন। পরিবারের সব দায়িত্ব সন্তানের হাতে তুলে দিয়ে পূজর্চনা, ধ্যান এবং মানবসেবায় নিয়োজিত হন।
১৫. সন্ন্যাস : যদিও ৭৫ বছর বয়সে সন্ন্যাস গ্রহণ করার কথা বলা আছে তারপরেও আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং আধ্যাত্মিকতা দ্বারা যিনি জাগতিক সবকিছু থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারেন তিনিই সন্ন্যাস গ্রহণ করবেন। এ সময় তিনি ধনসম্পদ, সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধন এবং সকল ইচ্ছা আকাক্সক্ষা পরিত্যাগ করবেন । গাঢ় হলুদ রঙের ঢিলেঢালা পোশাক এই কঠোর জীবনের প্রতীক। তার কোনো নির্দিষ্ট পরিবার সমাজ অথবা গৃহ নেই।
১৬. অন্ত্যেষ্টী : মৃত্যুর পর শবদাহ করা হয়। কিন্তু আত্মা অমর। যখন দেহ অগ্নিতে দাহ করা হয় তখন শরীর যে পাঁচটি উপাদান দিয়ে তৈরি, যেমন মাটি, জল, আগুন, বাতাস এবং আকাশ প্রকৃতিতে মিশে যায়। মৃতের আত্মার শান্তিতে প্রার্থনা করা হয়। শবদাহ হচ্ছে মৃতদেহ সৎকারের সবচেয়ে ভালো উপায়।
মেহেন্দি বিয়ের সময় কেন হাতে পায়ে লাগানো হয়?
প্রাচীন কাল থেকেই বিবাহ অনুষ্ঠানে মেহেন্দির ভূমিকা অত্যন্ত্য গুরুত্ত্বপূর্ণ।
আমরা সাধারণত মেহেন্দি বা হেনা নামক বস্তুটি ব্যবহার করি প্রসাধন সামগ্রী
হিসেবে। বাঙালী অবাঙালী নির্বিশেষে প্রায় সকলেই যে কোনো শুভ অনুষ্ঠানে হাতে
আবার কখনোপায়েরপাতায় মেহেন্দি লাগিয়ে থাকে। তবে বিবাহ অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে
মেহেন্দির ব্যবহার অতন্ত্য গুরুত্তপূর্ণ। আমাদের হিন্দু সমাজে বিয়ে মানেই
হাজার ররকমের রীতি নীতি ,হাজার অনুষ্ঠান। মেহেন্দি রীতিটিও এই বিবাহ
অনুষ্ঠানের অন্তর্গত। তবে শুধু হিন্দু সমাজেই নয় মুসলিমরা তাদের যেকোনো শুভ
অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে মেহেন্দি পরে থাকেন। শুধু সৌন্দর্য বৃদ্ধিই নয়
মেহেন্দির আরো কিছু গুন্ আছে যে কারণে প্রাচীন কাল থেকেই বিবাহ অনুষ্ঠানে
মেহেন্দির ভূমিকা অত্যন্ত্য গুরুত্ত্বপূর্ণ। আসুন জেনে নেওয়া যাক এই
প্রথাটির পেছনের আসল রহস্য।
বিয়ের এক দিন আগে এই মেহেন্দি রীতিটি পালিত
হয় নাচ গান এর মাধ্যমে। হবু বধূটির সাথে সাথে পরিবারের ছোট বড় সকল মহিলারাই
তাদের হাতে ও পায়ে মেহেন্দি পড়েন। শুধু নব বধূই নয় হবু বরকে ও মেহেন্দি
পড়তে দেখা যায়। বলা হয়ে থাকে যে মেহেন্দির রং যত ঘন হয় বিবাহিত জীবন তত
বেশি সুখের হয়। অর্থাৎ মেহেন্দি নব বর ও বধূর ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে কাজ
করে।
শুধু ভালোবাসার প্রতীকই হয় এর ঔষধি গুন্ আসলে এই প্রথাটির প্রচলনের অন্যতম
কারণ। বিয়ে মানেই হাজার রকমের প্রথা হাজার রকমের নিয়ম যা অনেক সময়ই মানসিক
চাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যা থেকে মাথা ব্যাথা ,মাথা ধরা বা শরীরকে অকারণ
পরিশ্রান্ত করে তোলে। এটি একটি অন্যতম কারণ এই মেহেন্দি প্রথার। হাতে
এবংপায়ের পাতায় লাগানো মেহেন্দি শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে এবং অকারণ
মানসিক চাপ,অবসাদ বা উদ্বিগ্নতার হাত থেকে মুক্তি দেয়।
মেহেন্দি অ্যান্টিসেপ্টিক ও অ্যান্টিফাঙ্গাল হিসেবেও কাজ করে। তাই বিয়ের আগে বড় ও বধূর হাতে এই প্রলেপ লাগানো হয় যাতে কোনো রকম ছোয়াচে রোগ যেমন জ্বর, সর্দি ,কাশি এইসমস্ত অযাচিত রোগের আক্রমণ থেকে নব বধূ ও বরকে দূরে রাখা যায়।
বিবাহের
বিভিন্ন রীতি নীতি পালন করার সময় যদি কোনো ছোট দুর্ঘটনা যেমন কেটে যাওয়া
ছড়ে যাওয়া ইত্যাদির হয়েই থাকে। মেহেন্দির প্রলেপ এই সমস্থ কাটাছেঁড়াকে
তাড়াতড়ি সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে।
মেহেন্দির ঔষধিগুন্কে বাড়িয়ে তোলার জন্য জলের সাথে উক্যালিপ্টাস এর
তেল,লেবুর রস,লবঙ্গের তেল ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এর ফলে শুধু এর ঔষধি গুন
বাড়েনা সাথে সাথে মেহেন্দির রং ও গাঢ় হয়। এছাড়া মিশ্রনের সুবাস শরীর ও মনকে
ভালো রাখে। এছাড়া মেহিন্দি শরীরে রক্তচলাচলকে সঠিকরাখে শরীরকে সুস্থ রাখতে
সাহায্য করে।
প্রাচীনকালে বিশ্বাস করা হতো যে মেহেন্দির প্রলেপ হবু বধূ এবং বরকে যে কোনো রকম অশুভ শক্তির ছায়া থেকে দূরে রাখে। তবে আজকাল বিয়ের জাকজমকের মধ্যে মানুষ মেহেন্দির আসল গুনগুলিকে ভুলতে বসেছে।
তবুও বলা যেতেই পারে যে মেহেন্দি একধারে তার গুণগুলি দিয়ে নববধূটিকে সুস্থ্য রাখতে সাহায্য করে। আর এই রীতিটির মাধ্যমে সকলে নিজেদের ভালোবাসা আশীর্বাদ দিয়ে নব দম্পতির আগাম জীবনের মঙ্গল কামনা করে থাকে।
শেয়ার করে অন্যদের জানতে সহায়তা করুন
হিন্দু মহিলারা কেন সিঁথিতে সিঁদুর পরেন?
লাল রঙ শক্তি ও ভালোবাসাকে বহন করে বলে মনে করা হয়। কিন্তু ধর্ম নয় বৈজ্ঞানিকরাও সিঁদুর পরার কিছু বৈজ্ঞানিক ব্যাখা দিয়েছেন।প্রাচীন সময়কাল থেকে হিন্দু মহিলারা স্বামীর জন্য সিঁথিতে সিঁদুর পরে আসেন। সিঁদুরকে মেয়েদের ১৬ সিঙ্গারের মধ্যে একটা মানা হয়। বিবাহিত মহিলাদের এক প্রকার প্রতীক হিসেবে দেখা হয় সিঁদুরকে। হিন্দু ধর্মে বলা হয় সিঁদুরের লাল রঙ স্বামীর দীর্ঘ জীবনের কামনা করে মহিলারা পরেন। লাল রঙ শক্তি ও ভালোবাসাকে বহন করে বলে মনে করা হয়। কিন্তু ধর্ম নয় বৈজ্ঞানিকরাও সিঁদুর পরার কিছু বৈজ্ঞানিক ব্যাখা দিয়েছেন। চলুন দেখে নেওয়া যাক হিন্দু ধর্ম মতে ও বৈজ্ঞানিক মতে সিঁদুর পরার ব্যাখা।
হিন্দু ধর্ম অনুযায়ী কেন সিঁদুর পরা উচিত মহিলাদের
সিঁদুর বিবাহিত মহিলার প্রতীক। যা তারা স্বামীর মঙ্গলকামনা করে পরে থাকে। হিন্দু ধর্মে মনে করা হয়, স্ত্রী তার সিঁদুরের শক্তিতে স্বামীকে যেকোনো বিপদের থেকে বাঁচাতে পারে। তাই ধর্মে বিবাহিত মহিলাদের বিয়ের পর সিঁদুর পরা রীতি।
হিন্দু শাস্ত্র মতে দেবী লক্ষ্মীকে মাথায় বিরাজমান মানা হয়। তাই দেবী লক্ষ্মীকে সন্মান করতে বিবাহিত মহিলারা সিঁথিতে সিঁদুর পরে থাকেন। দেবী লক্ষ্মীর কৃপায় স্বামী ও স্ত্রী একসাথে সুখে থাকেন মানা হয়। সম্পর্কে কোন সমস্যা আসে না দেবী লক্ষ্মীর কৃপায়।
হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী সিঁদুরকে শক্তির প্রতীক মানা হয়। প্রাচীনকাল থেকে বলা হয়ে আসছে লাল রঙ সৃষ্টির প্রতীক। লাল রঙকে প্রাকৃতিক সৃষ্টির সৃষ্টিকর্তা মানা হয়। তাই ভারতীয় নারীরা একান্ত প্রসাধন হিসেবে সিঁদুরকে প্রাচীনকাল থেকে ধারন করে আসছে। নারীর কপালে সিঁদুর সন্তান ধারণের ক্ষমতাকে বর্ণনা করে।
হিন্দু শাস্ত্রে বলা হয়। শরীরের বিভিন্ন স্থানে দেবতা বিরাজমান থাকেন। বলা হয় যে স্বয়ং ব্রহ্মা কপালে অধিষ্ঠান করেন। ব্রহ্মাকে সন্মান জানাতে ও তুষ্ট রাখতে বিবাহিত মহিলাদের কপালে সিঁদুর পরা শাস্ত্র মতে উচিত।
বৈজ্ঞানিক মতে কেন সিঁদুর পরা উচিত মহিলাদের ?
সিঁদুর পরার কিছু বৈজ্ঞানিক দিক রয়েছে। যা বৈজ্ঞানিকরা ব্যাখা করেছেন। বৈজ্ঞানিক মতে সিঁদুর মস্তিষ্ক ও মাথার নার্ভের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। মহিলারা যেখানে সিঁদুর পরেন, মাথার সেই জায়গায় গুরুত্বপূর্ণ নার্ভ থাকে। মেডিটেশানে সাহায্য করে।
ঘুম বাড়াতে সাহায্য করে সিঁদুর। সিঁদুর পরার সময় মাথায় চাপ প্রয়োগ হয়। যা মাথার জন্য এক প্রকারের ম্যাসাজ। যা মস্তিষ্ককে শান্ত রাখতে সাহায্য করে। ফলে ঘুমের সমস্যা দেখা দেয় না। বৈজ্ঞানিকদের মতে মাথার যে জায়গায় সিঁদুর পরা হয় তাকে আমরা বলি ব্রহ্মতালু। এই স্থানের সাথে ব্রেনের কানেকশান রয়েছে। ফলে সিঁদুর মহিলাদের মাথাব্যাথা, ট্রেস, দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত রাখতে সাহায্য করে।
বিয়ের পর মহিলাদের জীবনে নানা চাপ চলে আসে। সিঁদুরের মধ্যে থাকা পদার্থ মাথা শান্ত রাখতে সাহায্য করে। তাই সিঁদুর মন ও শরীর উভয়ের জন্য খুবই কার্যকরী।
প্রাচীন সময়কাল থেকে সিঁদুরকে ধর্মীয় ও বৈজ্ঞানিক উভয় দিক থেকে শুভ মনে করা হয়ে আসছে বিবাহিত মহিলাদের জন্য। তবে বর্তমান সময়ের মহিলাদের পাল্টা প্রশ্ন উঠে আসছে। যা যুক্তিসঙ্গত ভাবে সঠিক। কেন সব সময় মহিলারা নিজের বিবাহিত হওয়ার প্রমান দেবেন। কেন পুরুষরা স্ত্রীর জীবনের আয়ু বৃদ্ধির জন্য কোন প্রতীককে বহন করেন না। যাই হোক সিঁদুর পরা বা না পরা ব্যাক্তিগত পছন্দ বর্তমান সময়ে।
(c) https://dusbus.com
No comments:
Post a Comment
পোস্টটি ভালো লাগলে কমেন্ট করুন। আপনার কোন তথ্য সংরক্ষণ বা প্রকাশ করা হবে না। আপনি Anonymous বা পরিচয় গোপন করেও কমেন্ট করতে পারেন।