“এতে চাংশকলাঃ পুংসঃ কৃষ্ণস্তু ভগবান স্বয়ম।
ইন্দ্রারি-ব্যাকুলং লোকং মৃড়য়ন্তি যুগে যুগে॥”
অর্থাৎ, সর্বশক্তি পূর্ণ হেতু নন্দসূতহরি।
একমাত্র ভগবান জেনো দৃঢ় করি॥
যখন অসুরগণ হইয়া প্রবল।
ভুবন ব্যাকুল করে প্রকাশিয়া বল ৷
সেই কালে অংশ-কলা রূপে ভগবান।
অবতীর্ণ হঞা করে। সৰ্ব্বলোক ত্রাণ। (চৈ.চ)
গৌরচন্দ্ৰ, কৃষ্ণাবতার, তিনিই,
“অবতীর্ণঃ পুনঃ কৃষ্ণো গৌরচন্দ্র সনাতনঃ।
মগ্নাস্ত্রিভাগ পাপেহস্মিন তেষাং ত্ৰাণস্য হেতবে॥”
এই পৃথিবী যখন তিন পাদ পাপে পরিপূর্ণ, তখন সংসারের পরিত্রাণের জন্য সনাতন শ্ৰীকৃষ্ণ গৌররূপে অবতীর্ণ হয়েছেন।
“শত শত পতিতানাং ত্ৰাণকর্তা প্রভুস্তং
কথমপি কিমুদোষে বঞ্চিতোহহং প্রপন্নঃ।
কলিভয় কৃতভীতং ত্রাহিসাং দীনবন্ধো
শরণাগত গতিত্ত্বং কিং ব্রুবে গৌরচন্দ্ৰ।
হে গৌরচন্দ্ৰ। তুমি শত শত পতিত জীবের উদ্ধার কর্তা। আমি কি দোষে কেন যে বঞ্চিত রইলাম জানি না। হে দীনবন্ধো! আমি কলির ভয়ে ভীত হয়েছি, আমাকে ত্রাণ কর। আমি আর কি বলব, তুমি তো অশরণের একমাত্র গতি। নামের মহিমা হৃদয়ঙ্গম হয়ে ভজনকারীকে অবশ্যই কৃষ্ণাভিমুখী করে।
ভারতবর্ষে প্রায় প্রতিটি ভাষার মূল সংস্কৃত। এই ভাষার ব্যাকরণ অনুসারে ব্যাখ্যা করলে দেখা যায় যে তারকব্রহ্মনামের প্রত্যেক শব্দ সম্বোধনবাচক। ‘হরে’ মুনি শব্দের ন্যায় সম্বোধনের রূপ। অর্থ-হে হরি, কৃষ্ণ, নর শব্দের মত সম্বোধনের রূপ। অর্থ-হে কৃষ্ণ! ‘রাম’ শব্দটির তদ্রুপ অর্থ হে রাম!
হে হরি, হে কৃষ্ণ, হে হরি, হে রাম, অর্থ ভিন্ন সাধারণ জ্ঞানে অন্য অর্থ দেখা যায় না। কিন্তু আধ্যাত্মিক তত্ত্ব দ্বারা বিচার করলে দেখা যায় যে হরি কথার অর্থ “হরত্যবিদ্যামিতি হরিঃ” অর্থাৎ অবিদ্যা হরণ করেন বলে হরি। এখন প্রশ্ন অবিদ্যা কি? অজ্ঞান, মায়া, মোহ ইত্যাদি অবিদ্যা। ‘কৃষ্ণ’ শব্দ কৃষ্ ধাতু নক্ প্ৰত্যয়যোগে গঠিত। কৃষ্ ধাতুর অর্থ কর্ষণ বা আকর্ষণ করা, অতএব কৃষ্ণ কথার অর্থ “ভক্তদুঃখ কৰ্ষিত্বাৎকৃষ্ণঃ।” অর্থাৎ ভক্তের দুঃখ কর্ষণ করেন বা অপসৃত করেন বলে ‘কৃষ্ণ’। আবার ভক্তকে আকর্ষণ করেন বলেও ‘কৃষ্ণ’। এখন আমাদের জানা দরকার দুঃখ কি ? জন্ম, মৃত্যু, জরা ব্যাধি জীবের প্রধান দুঃখ। এতদভিন্ন জাত ব্যক্তির আরও দুঃখ ভোগ হয়। সেগুলি তিনভাগে বিভক্ত। (১) আধ্যাত্মিক (২) আধিদৈবিক, (৩) আধিভৈৗতিক। এই দুঃখত্ৰয়ের নাম ত্রিভাগ জ্বালা। রোগ শোক, অভাব অভিযোগ, জ্বালা যন্ত্রণা ইত্যাদি আধ্যাত্মিক দুঃখ। ঝড়, বৃষ্টি, অগ্নি, বজ্র ইত্যাদির আঘাতজনিত দুঃখ ইত্যাদি আধিদৈবিক দুঃখ এবং শৃগাল, কুকুর, ব্যাঘ্ৰ, সৰ্প প্রভৃতি হিংস্র জন্তুর দংশনজনিত দুঃখ হল আধিভৌতিক দুঃখ।
‘রাম’ শব্দের অর্থ ‘রমতি হৃদয়মিতি রামঃ”। অর্থাৎ হৃদয়কে রমণ করেন বলে রাম। রমণ কি? আনন্দদান। আনন্দস্বরূপ ‘হরে কৃষ্ণ’ শব্দদ্বয়ের অর্থ একত্রে অবিদ্যা হরণ করে আকর্ষণ করা। সেরূপ ‘হরে রাম’ শব্দদুটির অর্থ হৃদয়কে সুন্দর করে আনন্দ বিধান করা।
#বৈষ্ণব দর্পণ- অমেন্দ্র নাথ সাহা।
নিবেদনে- শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা দর্পণ।
No comments:
Post a Comment
পোস্টটি ভালো লাগলে কমেন্ট করুন। আপনার কোন তথ্য সংরক্ষণ বা প্রকাশ করা হবে না। আপনি Anonymous বা পরিচয় গোপন করেও কমেন্ট করতে পারেন।