স্বামী বিবেকানন্দ (১২ জানুয়ারি, ১৮৬৩ –৪ জুলাই, ১৯০২; পিতৃদত্ত নাম
নরেন্দ্রনাথ দত্ত) ছিলেন একজন ভারতীয় হিন্দু সন্ন্যাসী এবং উনবিংশ
শতাব্দীর হিন্দু ধর্মগুরু পরমহংসের প্রধান শিষ্য। পাশ্চাত্য জগতে ভারতের
বেদান্ত ও যোগ দর্শনকে পরিচিত করে তোলার ক্ষেত্রে তিনি অন্যতম প্রধান
ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। উনবিংশ শতাব্দীতে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষের
মধ্যে একে অপরের ধর্ম সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং হিন্দুধর্মকে বিশ্বের
অন্যতম প্রধান ধর্মের মর্যাদা অর্জনের ক্ষেত্রেও তাঁর বিশেষ অবদান রয়েছে।
বিবেকানন্দ ছিলেন ভারতে হিন্দু নবজাগরণের অন্যতম পথিকৃত এবং ব্রিটিশ ভারতে
জাতীয়তাবাদী ধারণার অন্যতম প্রবক্তা। তিনি রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশন
প্রতিষ্ঠা করেন।
বিবেকানন্দ যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন স্থানে অতিথি হিসেবে ভ্রমণ করেন। তার
জনপ্রিয়তা "সহস্র জীবন ও ধর্মের" উপর নতুন অভিমতের দ্বার উন্মোচন করে।ব্রুকলিন এথিক্যাল সোসাইটির একটি প্রশ্ন-উত্তর পর্বের সময়, তিনি মন্তব্য
করেছিলেন, "প্রাশ্চাত্যের প্রতি আমার একটি বার্তা রয়েছে, যেমনটা বুদ্ধের
ছিল প্রাচ্যের প্রতি।"
Photo:Chalo Kolkata |
আমেরিকায় তার প্রথম পরিদর্শনের সময় ১৮৯৫ ও ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি দু-বার ইংল্যান্ড ভ্রমণ করেন এবং সেখানে তার বক্তৃতাসমূহ সফল ছিল। এখানে তিনি সাক্ষাত পান এক আইরিশ মহিলা মিস মার্গারেট নোবলের; যিনি পরে ভগিনী নিবেদিতা নামে পরিচিত হন। ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে তার দ্বিতীয় ইংল্যান্ড ভ্রমণের সময় পিমলিকোতে এক গৃহে অবস্থানকালে বিবেকানন্দ দেখা পান অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিখ্যাত ভারততত্ত্ববিদ ম্যাক্স মুলারের, যিনি পাশ্চাত্যে রামকৃষ্ণের প্রথম আত্মজীবনী লেখেন।[১১৩] ইংল্যান্ড থেকে তিনি অন্যান্য ইউরোপীয় দেশেও ভ্রমণ করেছেন। জার্মানিতে তিনি আরেক ভারততত্ত্ববিদ পল ডিউসেনের সঙ্গ সাক্ষাত করেন। তিনি দুটি শিক্ষায়তনিক প্রস্তাবও পান, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাচ্য দর্শনের চেয়ার এবং কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে একই ধরনের প্রস্তাব। তিনি উভয় প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন এই বলে যে, পরিভ্রমণকারী সন্ন্যাসী হিসেবে তিনি এই ধরনের কাজে স্থিত হতে পারবেন না।
ধর্মপ্রচারে পরিবর্তন আনতে তার সফল্ ভূমিকা ছিল, বিশেষ করে পাশ্চাত্যে বেদান্ত কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা।বিবেকানন্দ সনাতন হিন্দু ধারণা অভিযোজিত করেছিলেন এবং পশ্চিমীদের চাহিদা ও সমঝোতা অনুযায়ী ধর্মভাবের মিশ্রন ঘটিয়েছিলেন, যারা পশ্চিমী গূঢ় ঐতিহ্য ও আন্দোলনের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন। হিন্দু ধর্মভাবে তার গুরুত্বপূর্ণ অভিযোজনের মধ্যে ছিল চারটি যোগব্যায়ামের পদ্ধতি, যার মধ্যে রাজযোগ, পতঞ্জলির যোগ সূত্রের ব্যাখ্যা, অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দে তার বই রাজযোগ প্রকাশিত হয়, যা তাৎক্ষণিক সাফল্য লাভ করে এবং প্রাশ্চাত্যে যোগ ব্যাখ্যার জন্য অত্যন্ত প্রভাবশালী ভূমিকা রেখেছিল।
তিনি আমেরিকা এবং ইউরোপের কতিপয় অকৃত্রিম শিষ্যকে আকৃষ্ট করেছেন, যার মধ্যে ছিলেন জোসেফিন ম্যাকলিওড, উইলিয়াম জেমস, জোসাই রয়েস, রবার্ট জি ইঙ্গারসোল, নিকোলা টেসলা, লর্ড কেলভিন, হ্যারিয়েট মনরো, এলা হুইলার উইলকক্স, সারাহ বার্নহার্ডট, এমা ক্যালভি, হারম্যান লুডউইক ফারডিন্যান্ড ভন হেলমহোলটজ।[১৩][১১১][১১৪][১২১] তার বেশ কিছু দীক্ষাপ্রাপ্ত অনুগামী ছিলেন: মারি লুইস (একজন ফরাসি মহিলা) যিনি পরবর্তীতে স্বামী অভয়ানন্দ এবং লিওন ল্যান্ডসবার্গ, যিনি পরবর্তীতে স্বামী কৃপানন্দ হিসেবে পরিচিত হন; যাতে তারা বেদান্ত সোসাইটি অব মিশন নিয়ে কাজ চালিয়ে যেতে পারেন। এমনকি এযাবৎকাল পর্যন্ত এখানে বিদেশি নাগরিকদের আনাগোনা রয়েছে যা লস অ্যাঞ্জেলেসে অবস্থিত। আমেরিকা থাকাকালীন বিবেকানন্দকে ক্যালিফোর্নিয়ার সান হোসে রাজ্যের দক্ষিণ পর্বতে বেদান্ত ছাত্রদের জন্য একটি আশ্রম স্থাপনের উদ্দেশ্যে জমি দেওয়া হয়। তিনি এটিকে শান্তি আশ্রম নামে উল্লেখ করেন। বেদান্ত সমাজ হল হলিউডের দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত আমেরিকার বৃহত্তম কেন্দ্র (বারোটি অন্যতম কেন্দ্রের মধ্যে)। ইংরেজিতে বেদান্ত সম্পর্কে বই এবং হিন্দু ধর্মগ্রন্থ অনুবাদ এবং গ্রন্থে প্রকাশের জন্য হলিউডে একটি বেদান্ত প্রকাশনাও রয়েছে। ডেট্রয়েটের ক্রিস্টিনা গ্রিনসটিডেল একটি মন্ত্রে মাধ্যমে বিবেকানন্দ কর্তৃক দীক্ষাপ্রাপ্ত হয়েছিলেন, যিনি পরবর্তীতে ভগিনী ক্রিস্টিন হিসেবে পরিচত হন, এবং তারা একটি ঘনিষ্ঠ বাবা-মেয়ের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত করেন। স্বামী বিবেকানন্দের ধারণাসমূহ বেশ কয়েকজন পণ্ডিত ও বিখ্যাত চিন্তাবিদ কর্তৃক প্রশংসিত হয় - উইলিয়াম জেমস, জোসেফ রয়েস, সিসি এভারেট, হার্ভার্ড ধর্মশাস্ত্র বিদ্যালয়ের ডিন, রবার্ট জি ইনগারসোল, নিকোলা টেসলা, লর্ড কেলভিন এবং অধ্যাপক হারম্যান লুডউইক ফারডিন্যান্ড ভন হেলমহোলটজ।
স্বামীজীর জীবনের ঘটনাপঞ্জী
১৮৬৩ | ১২ জানুয়ারি জন্ম, কলিকাতায় |
১৮৭০ | বিদ্যাসাগরের বিদ্যালয়ে |
১৮৭৮ | রায়পুরে (স্বাস্থ্য পরিবর্তন) |
১৮৭৯ | প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ |
১৮৮০ | কলেজে ও ব্রাহ্মসমাজে |
১৮৮১ | শ্রীরামকৃষ্ণকে প্রথম দর্শন |
১৮৮৪ | পিতৃবিয়োগ |
১৮৮৬ | কাশীপুরে শ্রীরামকৃষ্ণের লীলা-সংবরণ, বরাহনগরের মঠ শুরু |
১৮৮৭ | গুরুভ্রাতাগণের সহিত সন্ন্যাসগ্রহণ, তপস্যা ও অধ্যয়ন |
১৮৯০ | পরিব্রজ্যা—উত্তর ভারতে ও হিমালয়ে |
১৮৯১ | একাকী যাত্রা |
১৮৯২ | পশ্চিম ভারতে, দাক্ষিণাত্যে ও কন্যাকুমারিকায় |
১৮৯৩ | জাপান হইয়া আমেরিকা যাত্রা, চিকাগো-ধর্মমহাসভায় |
১৮৯৪ | আমেরিকায় নানাস্থানে বক্তৃতা |
১৮৯৫ | নিউ ইয়র্কে ক্লাস; ইংলণ্ড যাত্রা |
১৮৯৬ | নিউ ইয়র্ক বেদান্ত-সমিতি গঠন; পুনরায় ইংলণ্ডে; ইওরোপ ভ্রমণ |
১৮৯৭ | ভারতে প্রত্যাবর্তন এবং ১ মে রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা; উত্তর ভারতে ও রাজপুতানায় |
১৮৯৮ | ভগিনী নিবেদিতার আগমন, কাশ্মীরে ও হিমালয়ে, বেলুড় মঠ স্থাপন |
১৮৯৯ | ইংলণ্ড যাত্রা; আমেরিকায় ক্যালিফোর্নিয়া অঞ্চলে বক্তৃতা |
১৯০০ | প্যারিস ধর্মেতিহাস-সম্মেলনে |
১৯০১ | মায়াবতী, পূর্ববঙ্গ ও আসামে |
১৯০২ | ৪ জুলাই মহাসমাধি—বেলুড় মঠে। |
বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা সমগ্র স্বামীজীর বাণী সমগ্র ডাউনলোড করুন।
২) ডাউনলোড: দ্বিতীয় খন্ড
৩) ডাউনলোড: তৃতীয় খন্ড
৪) ডাউনলোড:চতুর্থ খন্ড
৫) ডাউনলোড:পঞ্চম খন্ড
৬) ডাউনলোড: ষষ্ঠ খন্ড
৭)ডাউনলোড: সপ্তম খন্ড
৮)ডাউনলোড:অষ্টম খন্ড
৯)ডাউনলোড:নবম খন্ড
১০)ডাউনলোড:দশম খন্ড
No comments:
Post a Comment
পোস্টটি ভালো লাগলে কমেন্ট করুন। আপনার কোন তথ্য সংরক্ষণ বা প্রকাশ করা হবে না। আপনি Anonymous বা পরিচয় গোপন করেও কমেন্ট করতে পারেন।