স্বর্গ লোকে গমন করেছেন নিখিল সেন গুপ্ত
আমাদের সবাইকে কাঁদিয়ে এ পৃথিবীর সকল মোহ ত্যাগ করে স্বর্গ লোকে গমন করেছেন নিখিল সেন গুপ্ত (দিবাং লোকাং স্ব গচ্ছাতু)। নিখিল সেন গুপ্ত বাংলাদেশের একজন প্রথিতযশা নাট্যকার ও সংস্কৃতি কর্মী, তিনি একাধারে অভিনয় শিল্পী, সাংবাদিক, আবৃতি শিল্পী, নাট্যকার, সমাজ সেবক, ভাষা সৈনিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং জননন্দিত রাজনীতিবিদ ছিলেন। গতকাল সোমবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১টায় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনারী কেয়ার ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি পরলোকগমন করন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৮৮ বছর। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ০১ ছেলে ও ০২ মেয়ে সহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন। তার মৃত্যুতে শহর শোকাবহ হয়ে পড়েছে। নিখিল সেন নানা রোগে ভুগছিলেন। নিখিল সেন গুপ্ত ১৯৩১ সালের ১৬ এপ্রিল বরিশালে জন্মগ্রহন করেন। তার বাবার নাম স্বর্গীয় যতীশ চন্দ্র সেনগুপ্ত ও মা স্বর্গীয় সরোজিনী সেনগুপ্ত। তিনি তার বাবা মায়ের দশম সন্তানের মধ্যে চতুর্থ সন্তান ছিলেন।
আবৃতিতে অবদান রাখার জন্য ২০১৫ সালে শিল্পকলা পদক লাভ করেন নিখিল সেন গুপ্ত। ২০১৮ সালে নাটকে বিশেষ অবদান রাখায় গুনিজন হিসেবে দেশনেত্রী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার একুশে পদক সম্মাননা অর্জন করেন নিখিল সেন গুপ্ত। এছাড়াও শিল্পকলা একাডেমি সম্মাননা লাভ করেন ১৯৯৬ সালে, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন সম্মাননা লাভ করেন ১৯৯৯ সালে ও ২০০৫ সালে শহীদ মুনীর চৌধুরী সম্মাননা লাভ করেন অনন্য গুনের অধিকারী নিথিল সেন গুপ্ত।
নিখিল সেন গুপ্ত কলিকাতা সিটি কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করে এবং নিজ জন্মস্থান বরিশালে ফিরে আসেন। সিরাজের স্বপ্ন নাটকের মাধ্যমে তার নাট্যজীবন শুরু করেন। ওই নাটকের মূল চরিত্র সিরাজ চরিত্রে অভিয়ন করেছিলেন তিনি। তারপর তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।এরপর ২৮টি নাটকের দিক নির্দেশনা দিয়েছেন নিখিল সেন গুপ্ত। বরিশাল সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সর্বত্র পদচারনা ছিলো তার। তিনি বরিশাল প্রেসক্লাবের সদস্য ছিলেন। নগরীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপিঠ অমৃত লাল দে মহাবিদ্যালয় অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং উদিচী কেন্দ্রিয় কমিটির সাবেক সহসভাপতি ছিলেন তিনি। ১৯৮৩ সালে বরিশাল নাটক পরিচালিত বাংলাদেশের প্রথম আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। রাজনৈতিক অঙ্গনে কমিউনিস্ট আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবরের ডাকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন নিথিল সেন গুপ্ত। এছাড়া ৫২ এর ভাষা আন্দোলনেও তার ভুমিকা ছিলো অপরিসীম।
প্রয়াত নিখিল সেনের শূন্যস্থান পূরন করার মতো নয় বলে জানিয়েছেন তার সহকর্মী ও স্বজনেরা। সর্বসাধারনের শ্রদ্ধা জানানোর পর তার মৃতদেহ বরিশাল মহাশ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
No comments:
Post a Comment
পোস্টটি ভালো লাগলে কমেন্ট করুন। আপনার কোন তথ্য সংরক্ষণ বা প্রকাশ করা হবে না। আপনি Anonymous বা পরিচয় গোপন করেও কমেন্ট করতে পারেন।