সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সান ডিয়েগো শহরে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফর্নিয়ার এক দল গবেষক সূর্যের আলোর উপর একটি গবেষণা চালিয়েছেন।
গবেষণাটি চালানো হয় পৃথিবীর ১৭৭টি দেশের মানুষের উপর। গবেষণার বিষয়টা ছিল প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ মিনিট সূর্যালোকে থাকলে মানব দেহে কি ধরণের উপকারিতা হতে পারে। প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা যাচ্ছে যে, অপর্যাপ্ত সূর্যালোক আমাদের দেহে ভিটামিন ডি এর অভাব ঘটায়, কোলোরেক্টাল (পায়ু) এবং ব্রেস্ট ক্যান্সার (স্তন্য) হওয়ার সম্ভবনা থাকে। সুতারাং প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ মিনিট সূর্যালোকে থাকলে এই রোগ গুলোকে বিদায় জানানো সম্ভব। যুক্তরাষ্ট্রের সান ডিয়েগো স্কুল অফ মেডিসিন এর ডাক্তার কেড্রিক গারল্যান্ড (Cedric Garland, DrPh,) এর মতে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ মিনিট সূর্য্যালোকে সানবাথ বা সূর্য্যস্নান করলে মানব দেহের ভিটামিন ডি এর চাহিদা মেটানো যায়। এর ফলে ১,000 IUs ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। এবং এর সাথে যদি ডায়েট কন্ট্রোল করা যায় তবে সবচেয়ে বেশি উপযোগী হবে।
সূর্যের আলোতে থাকার উপকারিতা গুলো নিচেই আলোকপাত করা হলো।
ভাল ঘুম হবে :
প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ মিনিট সূর্যালোকে থাকার ফলে আমরা এক ধরণের জীবনীশক্তি ফিরে পায় যা শারীরিক, মানসিক এবং আচরণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। প্রাকৃতিক সূর্যালোক আমাদের বডিকে দিনের বেলায় সতেজ রাখে।রাকৃতিক সূর্যালোক আমাদের বডিকে একধরণের সিগন্যাল দেয় যা কৃত্রিম আলো থেকে পাওয়া অসম্ভব। আবার সন্ধ্যায় অন্ধকার নামার সাথে আমাদের বডি সিষ্টেম নিস্তেজ হতে থাকে।
আর এই প্রাকৃতিক সূর্যের আলো পাওয়ার উপযুক্ত সময় হলো সকাল বেলা Discovery. com এর মতে, সকালে তুমি যত কম সূর্যালোকে থাকবে ততবেশি ঘুমের সমস্যা হবে। এবং সূর্যালোকে না থাকলে নিদৃষ্ট সময়ে প্রতিদিন ঘুম থেকে ওঠার সমস্যার সৃষ্টি হবে।
মেজাজ ভালো করে :
প্রাকৃতিক সূর্যালোক আমাদের দেহে সেরোটোনিন (Serotonin) নামক একটি উপাদান বৃদ্ধি করে যা আমাদের দেহকে সক্রিয় ও এলার্ট রাখে।নিয়মিত প্রাকৃতিক সূর্যালোকে থাকলে সেরোটোনিন (Serotonin) লেভেল বাড়ানোর জন্য কোন ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন হয় না।পর্যাপ্ত সেরোটোনিন (Serotonin) লেভেল আমাদের জন্য পজেটিভ (ইতিবাচক)। ১০০ স্বাস্থ্যকর মানুষের উপর চালানো এক গবেষণা দেখা গেছে গ্রীষ্মকালে তাদের মস্তিষ্কে সেরোটোনিন (Serotonin) লেভেল সবচেয়ে বেশি থাকে এবং শীতকালে সবচেয়ে কম থাকে। কারণ তারা শীতকালে কম প্রাকৃতিক সূর্যালোকে থাকেন। গবেষণাটি সুপারিশ করছে যে সাময়িক ব্যাধি / Seasonal affective disorder (SAD), সাময়িক বিষন্নতা এবং মেজাজ পরিবর্তনে সূর্যালোক বিশেষ ভূমিকা পালন করে। সাময়িক ব্যাধি হলো এক ধরণের রোগ যা আপনাকে ক্লান্ত, কোন কিছুতে অমনোযোগী, ঘুম না হওয়া, এমনকি আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিতে পারে। সাময়িক ব্যাধি সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন। ইউনিভার্সিটি অফ হেলসিঙ্কি (University of Helsinki) এর ডাক্তার টিমো পারটোনেন (Timo Partonen) এবং তার সহকারীরা বলছেন শীতপ্রধান দেশে গ্রীষ্মকালে সেরোটোনিন (Serotonin) লেভেল বাড়ানোর জন্য বেশি করে প্রাকৃতিক সূর্যালোকে থাকার প্রয়োজন যা শীতকালের জন্য জমা থাকতে পারে। আর এজন্যই শীতপ্রধান দেশে গ্রীষ্মকালে মানুষকে সংবাদ করতে দেখা যায়।
রক্তের চাপ কমায় :
সূর্যালোকের বেগুনি রশ্মি [ultraviolet (UV) rays] থেকে নাইট্রিক অক্সাইড (nitric oxide) নামের একটি যৌগ পাওয়া যায় যা রক্তের চাপ ( Blood Pressure) কমায়। Edinburgh University এর dermatologist (চামড়া বিশেষজ্ঞ ডাক্তার) রা ৩৪ মানুষের উপর একটি গবেষণা চালিয়েছেন। তারা ঐ মানুষ গুলোকে প্রথমে এক ঘন্টার জন্য খালি গায়ে প্রাকৃতিক সূর্যালোকে রাখে। আবার তাদেরকে এক ঘন্টার জন্য খালি গায়ে বৈদ্যুতিক আলোয় রাখে। দেখা যায় নিদৃষ্ট সময় খালি গায়ে প্রাকৃতিক সূর্যালোকে থাকার পর তাদের রক্তের চাপ যথেষ্ট কম ছিল।
চামড়ার ক্যান্সার হতে রক্ষা করে :
মেলানোমা হলো কোষের ক্যান্সার যা চামড়ার রং দেয়। মেলানোমা বা চামড়ার ক্যান্সারের মারাত্মক গঠন যা অন্য কোন ক্যান্সারের চেয়ে দ্রুত বাড়ে।পর্যাপ্ত সময় খালি গায়ে প্রাকৃতিক সূর্যালোকে থাকলে মেলানোমা বা চামড়ার ক্যান্সারের হাত হতে রক্ষা পাওয়া যায়।খালি গায়ে প্রাকৃতিক সূর্যালোকে থাকলে অতিবেগুনী রশ্মির ওয়েভলেন্থ [ultraviolet radiation of short wavelegnths (UVB)] বিকিরণ হয় যা মেলানোমা বা চামড়ার ক্যান্সার হতে রক্ষা করে।বিজ্ঞানীরা দুই ধরণের মানুষের উওপর একটি গবেষণা চালায় : যারা দীর্ঘ সময় ঘরের মধ্যে কাজ করেন যেমন অফিসে এবং যারা দীর্ঘ সময় ঘরের বাইরে কাজ করেন যেমন - রাস্তা মেরামতের কাজ। দেখা যায় যারা দীর্ঘ সময় ঘরের মধ্যে কাজ করেন তাদের মধ্যে মেলানোমা বা চামড়ার ক্যান্সারের হার বেশি।
পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি :
পর্যাপ্ত সময় খালি গায়ে প্রাকৃতিক সূর্যালোকে থাকার সবচেয়ে বড় উপকারিতা হলো শরীরের ভিটামিন ডি এর চাহিদা মেটানো। মেডিকেলের ভাষায় আমাদের শরীরে ১০০০ ধরণের জিন শরীরের কলাকে (tissue) নিয়ন্ত্রণ করে।এই টিস্যু গুলো আবার ভিটামিন ডি৩(Vitamin D3) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। পর্যাপ্ত সময় খালি গায়ে প্রাকৃতিক সূর্যালোকে থাকলে সূর্য্যের আলো হতে অতি বেগুনি রশ্মি আমাদের শরীরে ভিটামিন ডি উৎপন্ন করে।ইহা আমাদের শরীরের ১০% জীনকে নিয়ন্ত্রণ করে। একটি শিশু হাসপাতালের ৫০০ বাচ্চার মধ্যে চালানো এক গবেষণায় দেখা গেছে যে এই বাচ্চারা দীর্ঘ্ এক বছর হাসপাতালে থাকার দরুন তাদের মধ্যে ভিটামিন ডি এর স্বল্পতা দেখা যায়।ভিটামিন ডি মানব দেহের হাড়ের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
হাড়ের বৃদ্ধি ঠিক মতো না হলে বাত ব্যাথা( multiple sclerosis), প্রদাহ (inflammation), বিষন্নতা (depression), কোলন বা ব্রেস্ট ক্যান্সার হতে পারে।
শীতপ্রধান দেশে গ্রীষ্মের সময় একটি পারিবারিক সূর্য স্নানের দৃশ্য |
সোর্স : গুগল, মেডিকেল ডেইলি, ডিসকোভারী.কম, উইকিপেডিয়া
বিজ্ঞান সম্মত একটি পোস্ট। ভালো উদ্দ্যেগ। মানুষ সচেতন হবে। ধন্যবাদ।
ReplyDeleteখুবে দরকারি একটি পোষ্ঠ ।
ReplyDeleteRecent all jobs circular