৬২ বছরে জীবনজয়ী এক নায়কের গল্প - UHC বাংলা

Untitled+2

...মুক্ত চিন্তায় বিশ্বাসী একটি গ্লোবাল বাংলা প্লাটফর্ম!

Home Top Ad

Saturday, January 19, 2019

demo-image

৬২ বছরে জীবনজয়ী এক নায়কের গল্প

আমরা একটুতে ধৈর্য্যহারা হয়ে পড়ি। পড়া শেষে চাকুরী না পেলেই হয়ে যায় বিষণ হতাশা গ্রস্থ। ইদানিং অনেক উচ্চ শিক্ষিত যুবক-যুবতীকে আত্মহত্যা করতে দেখা যাচ্ছে হতাশাগ্রস্থ হয়ে। কিন্তু কেন ? জীবন অল্প দিনের। যে কোন অবস্থায় যে সময় থেকে করা যেতে পারে একটি নতুন স্টার্ট। আজ আমি আপনাদের এমন একজন মানুষ গল্প শোনাবো যিনি জীবনের ৬২টি বছর সংগ্রাম করেছেন সফলতা পেতে। তবু তিনি জয় করে ছেড়েছেন।
আপনারা হয়তো ফাস্টফুড KFC এর নাম শুনেছেন বা খেয়েছেন। এখন আমাদের দেশের বড় বড় শহরে  KFC পাওয়া যায়।  KFC যিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তার নাম কলোনেল হারলান্ড স্যান্ডার্স (Colonel Harland Sanders)!
kfc-logo-383x330


স্যান্ডার্স ১৮৯০ আমেরিকার ইন্ডিয়ানা রাজ্যের হেনরিভিল নামক ছোট্ট শহরে জন্ম গ্রহণ করেন। এই বয়সে তাকে পরিবারের হাল ধরতে হয়। তিনি মায়ের কাছ থেকে রান্না শিখেছিলেন। মা বাইরে কাজ করেন। আর তাকে বাড়ি বসে রান্না করতে হয় এবং অন্যান্য ভাইবোনদের দেখা শুনা করতে হয়। ছোট ভাইবোনদের দেখাশুনা করার জন্য তিনি স্কুল ছাড়তে বাধ্য হন। ভাইবোনরা একটু বড় হলে তিনি একটি ফার্মে শ্রমিকের কাজ নেন। ১৬ বছর বয়সে তিনি আমেরিকান আর্মিতে চাকুরী নেন। কিন্তু ১ বছর পর বয়স চুরির জন্য আর্মি থেকে তাকে বরখাস্ত করা হয়। পরে তিনি রেলওয়ে শ্রমিকের কাজ করতে শুরু করেন। কিন্তু ভাগ্য এখানেও প্রসন্ন হয়নি। এক সহকর্মীর সাথে মারামারি করা জন্য তাকে বরখাস্ত করা হয়। পরে তিনি আবার মায়ের কাছে ফিরে আসেন।  নিজের শহরে এসে জীবনবীমা বিক্রির কাজ শুরু করেন। এখানেও টিকে থাকতে পারলেন না। কিন্তু তিনি ছেড়ে দেয়ার লোক না। ১৯২০ সালে যখন তার বয়স ত্রিশ তিনি ফেরী বোটের ব্যবসা শুরু করেন। তার পর তিনি লাইট তৈরির ব্যবসা শুরু করেন। কিন্তু তার পাশেই আর এক লোক স্যান্ডার্স এর চেয়ে ভালো লাইট বানানোয় তার ব্যবসা শিকেয় উঠে।
৪০ বছর বয়সে তিনি ভাবলেন আমি তো ভালো রান্না করতে পারি। একটি ফাস্টফুডের দোকান খুললে কেমন হয় ? তিনি একটি রেস্টুরেন্ট খুললেন যেখানে মূলত ফাস্টফুড বিক্রি করা হতো। নাম দিলেন Kentucky Fried Chicken - সংক্ষেপে KFC . কিছুটা সফল হলেন।রেস্টুরেন্ট  লাগোয়া একটি মোটেল কিনলেন। বেশ ভালোই চলছিল। কিন্তু ভাগ্যে না থাকলে কিছুই হয়না। হঠাৎ একদিন তার রেস্টুরেন্টে আগুন লাগে। আগুনে তার রেস্টুরেন্ট ও মোটেল পুড়ে ছারখার হয়ে যায়। মাটি ছাড়া কিছু অবশিষ্ট ছিল না।তিনি অনেকটা ভেঙে পড়লেন। তার হাতে আর কিছুই অবশিষ্ট ছিল না। তিনি ভাবলেন আমার রেস্টুরেন্ট ব্যবসা ভালোই চলছিল। তার কারণ ছিল তার রেস্টুরেন্ট কোন ট্রেডিশনাল খাবারের মেনু ছিল না। সেখানে তিনি নিজে নিজের পছন্দ মতো খাবারের মেনু বানাতেন যা ছিল বেশ মজাদার। নতুন করে রেস্টুরেন্ট দেয়ার টাকা তার কাছে ছিল না। তিনি ভাবলেন এই মেনু দিয়ে বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে খাবার তৈরী করলে কেমন হয় ? তিনি তার এই "ইউনিক মেনু" নিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে রেস্টুরেন্টে ঘুরতে থাকলেন।কিন্তু কেউ ট্রেডিশনাল খাবারের বাইরে তার ইউনিক মেনু দিয়ে খাবার তৈরী করতে রাজি হলো না। তিনি আমেরিকার বিভিন্ন রাজ্য ঘুরতে লাগলেন এই  ইউনিক মেনু নিয়ে। এ পর্যন্ত তিনি এক হাজার নয়টি (১,০০৯টি ) রেস্টুরেন্টের ডোরে ডোরে ঘুরেছেন। কিন্তু কেউ তার সিক্রেট মেনু নিলো না। তার মানে তিনি ১,০০৯ বার চেষ্টা করেও ব্যর্থ। ইতিমধ্যে তার বয়স ৬২ হয়ে গেছে। তবু তিনি হাল ছাড়েননি। ১,০০৯ বারের পর এক রেস্টুরেন্ট মালিক তার সেই ইউনিক KFC মেনু গ্রহণ করলেন। মূলত লসের কারণে  সেই  রেস্টুরেন্ট মালিকের ব্যবসা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল।তিনি ভাবলেন এটা নিয়ে একটা শেষ চেষ্টা করে দেখি। তিনি স্যান্ডার্স এর ইউনিক মেনু দিয়ে নতুন করে ঢেলে সাজালেন তার রেস্টুরেন্ট। নাম পাল্টে দিলেন রেস্টুরেন্টের। নাম রাখলেন স্যান্ডার্সের রেস্টুরেন্টের একই নামে - Kentucky Fried Chicken বা KFC !৬২ বছর ধরে ব্যর্থতা আর দুর্ভাগ্য এবার আলোর মুখ দেখতে পেলো। তার এই সিক্রেট মেনু মানুষ ভালোই পছন্দ করলো। আমেরিকার বিভিন্ন শহরে তার রেস্টুরেন্ট - KFC এর শাখা ব্যাঙের ছাতার মতো গজাতে শুরু করলো। এর স্বাদই যেন আলাদা। বিশ্বের অন্যান্য দেশেও ছড়াতে লাগলো তার ফাস্টফুড কোম্পানী। তখন তিনি তার কোম্পানি ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে বিক্রি করে দিলেন। যার বর্তমান বাজার মূল্য ১৫ মিলিয়ন ডলার- বাংলাদেশি টাকায় দাঁড়ায় 1,255,110,000.00 টাকা। 
kfc%252Bpic%252Bsf


৯০ বছর বয়সে স্যান্ডার্স নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। সেই সময় বিশ্বের ৪৮টি দেশে তার ৬,০০০ শাখা ছিল। এখন বিশ্বের ১১৮টি দেশে KFC-র প্রায় ২০,০০০ শাখা রয়েছে।এখনো বিশ্বের সব KFC-তে এবং খাবারের প্যাকেটে স্যান্ডার্সের ফটো এবং লোগো থাকে। KFC এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় খাবারের কোম্পানির একটি। তার মোটিভেশনের মাধ্যমে তিনি জীবনকে জয় করেছেন। 
সোর্স : গুগল, উইকিপিডিয়া

অন্যান্য

Post Bottom Ad

আকর্ষণীয় পোস্ট

code-box

Contact Form

Name

Email *

Message *