“এই ব্যক্তি হিন্দু ছিলে এখন মুসলমান হইয়াছে—হইকে (ইহাকে) সকলে সাহাৰ্য্য (সাহায্য) ও সহাভুতি (সহানুভূতি) করিবে কেহ কটুবাক্য ও অন্যান্য প্রতি লক্ষ (লক্ষ্য) রাখিয়া ইসলামের সৌন্দয্য (সৌন্দৰ্য) রক্ষা করিয়া ইহকাল পরকাল হাছিল (হাসিল) করিবে।
ইতি
মৌলবী আবদুল হামিদ; নারায়ণপুর, রায়শ্রীরামপুর, নোয়াখালী।”
[আমিষাপাড়ায় বারাহী মন্দিরের ধ্বংস আমরা পরিদর্শন করি। ইহা একটী প্রসিদ্ধ পীঠস্থানরূপে গণ্য। প্রতিষ্ঠিত মন্দিরে বারাহীমূর্ত্তি কদাচিৎ দেখিতে পাওয়া এই প্রাচীন মুর্ত্তির প্রতিষ্ঠার সময় দিগভ্রম হওয়াতে মূর্তির স্থাপনে ভুল হয়। শক্তিমূর্তি প্রধানতঃ দক্ষিণমুখী না হয় পশ্চিমমুখী ভাবে স্থাপিত হইয়া থাকে। এক্ষেত্রে পূর্বমুখী ভাবে স্থাপিত। এই ভূল হইতেই ভুলুয়া (ভুল হুয়া) পরগণার নামকরণ বলিয়া শোনা যায়। কৃষ্ণপ্রস্তরের মূৰ্ত্তি কুঠারের দ্বারা খণ্ডিত হইয়াছিল। মূৰ্ত্তির খণ্ডিত অংশগুলির কিছু ছিল বেগমগঞ্জ থানায়, কিছু ডাঃ শ্যামাপ্রসাদের নিকট, কিছু শরৎচন্দ্র (নেতাজী সুভাষ বসুর অগ্রজ) সংগ্রহ করেন। কিছু ছিল হাওড়ায় উদ্বাস্তু শিবিরে সেবায়েতদিগের এক বংশধরের নিকট। বেগমগঞ্জ থানায় গিয়া তথাকার সংগৃহীত অংশগুলি দেখিবার চেষ্টা করিয়াছিলাম। সমর্থ হই নাই। মূর্তির অংশগুলি একত্র করিয়া এবং পূর্বেকার চিত্র দেখিয়া অনুরূপ মুর্ত্তি গঠন করিয়া প্রতিষ্ঠার কথা শরৎচন্দ্রের সহিত হইয়াছিল। বল্লভাচারী সম্প্রদায়ের গুরু বোম্বাইয়ের শ্রীকৃষ্ণজীবনজী মহারাজ এই ভ্রমণে আমাদের সঙ্গী ছিলেন। তিনিও এ বিষয়ে বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করেন। কিন্তু কাৰ্যতঃ শেষ পর্যন্ত তাহা হইয়া উঠিল না দেখিতেছি। এখানে সেবায়ৎ পরিবারের একটী বালকের সহিত সাক্ষাৎ হয়। আক্রমণের সময়ে বেতস জঙ্গলের মধ্যে লুকাইয়া সে আত্মরক্ষা করে এবং একাদিক্রমে তিন দিন সেই ভাবে থাকে। আমাদের সহিত যখন সাক্ষাৎ তখনও গায়ে বেতকাঁটার ক্ষত রহিয়াছে।]
ব্যবস্থা করিতে আমাদিগের এই অভিজ্ঞতা হয়। চৌমুহনী হইতে আমিষাপাড়া যাইবার বাঁধান পথ আছে, মোটরে ঘণ্টাদুই লাগে। কিন্তু উপদ্রবের উদ্যোগেই আমিষাপাড়া হইতে মাইল দুয়েক আগে এই পথটি কাটিয়া দেওয়া হয় এবং ভাঙ্গনের ভিতর দিয়া জল বহিতে থাকে। মোটরে ভাঙ্গন পর্যন্ত গিয়া তথা হইতে নৌকায় যাইতে পারিলেও সময় সংক্ষেপ হইত, কিন্তু সেইখানে গিয়া নৌকা পাইবার কোন সম্ভাবনা ছিল না। সুতরাং গাড়ীর চেষ্টা ছাড়িয়া চৌমুহনী হইতেই আমাদের নৌকায় যাইতে হইল, এবং যে কাজ গাড়ীতে দুই ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছিয়া সারিয়া আসা চলিত, সেখানে যাইবার পথেই আমাদের ৫৬ ঘণ্টা লাগিয়া গেল। ফিরিবার সময়েও ঐ একই অবস্থা। অথচ স্থানীয় জেলাবোর্ড এবং গবর্ণমেন্ট মিলিয়া চেষ্টা করিলে রাস্তার ভাঙ্গনগুলি বহুদিন পূৰ্বেই মেরামত করিয়া ফেলিতে পারিতেন।
No comments:
Post a Comment
পোস্টটি ভালো লাগলে কমেন্ট করুন। আপনার কোন তথ্য সংরক্ষণ বা প্রকাশ করা হবে না। আপনি Anonymous বা পরিচয় গোপন করেও কমেন্ট করতে পারেন।