মহা শিবরাত্রি হল হিন্দু ধর্মের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ পুজোগুলির মধ্যে একটি। বিশেষত শৈব সম্প্রদায়ের মধ্যে এই পুজোর প্রচলন থাকলেও আজকাল সকলেই এই শিবরাত্রির ব্রত রাখতে পারেন।
অনেকের মনে করেন যে, শিবরাত্রি একটি মেয়েলি ব্রত, তবে এই ধারণা কিন্তু একেবারেই ঠিক নয়। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে যে-কেউই এই ব্রত রাখতে পারেন। প্রতি বছর ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে এই মহাশিবরাত্রি পালিত হয়ে থাকে।
২০২০ সালের শিবরাত্রির সময়সূচি:
বাংলা পঞ্জিকা মতে ২১ ফেব্রুয়ারি (৮ ফাল্গুন) বিকেল ৫.৪১ মিনিটে তিথি লাগছে এবং ২২ ফেব্রুয়ারি (৯ ফাল্গুন) সন্ধ্যা ৬.৩৯ মিনিটে ছেড়ে যাচ্ছে।
বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মতে:
চতুর্দশী আরম্ভ:
বাংলা তারিখ: ৮ ফাল্গুন ১৪২৬, শুক্রবার।
ইংরেজি তারিখ: ২১/০২/২০২০।
সময়: বিকাল ৫টা ২২ মিনিট থেকে।
নিশীথ রাত্রি শ্রীশ্রীশিব পূজা: মধ্যরাত্রি ১১টা ২৬ মিনিটের পরে ১২টা ১৪ মিনিটের মধ্যে।
চতুর্দশী শেষ:
বাংলা তারিখ: ৯ ফাল্গুন ১৪২৬, শনিবার।
ইংরেজি তারিখ: ২২/০২/২০২০।
সময়: রাত্রি ৭টা ৩ মিনিট পর্যন্ত।
শিবপূরাণে বলা রয়েছে, চতুর্দশী তিথিতে শিবরাত্রি পালিত হলেও প্রস্তুতি শুরু করতে হবে ত্রয়োদশীর দিন থেকেই। সেই অনুসারে ত্রয়োদশীর দিন এক বেলা নিরামিষ ভোজন করতে হয়। এরপর চতুর্দশীর দিন খুব সকাল সকাল উঠে কালো তিল ভেজানো জলে স্নান করতে হয়।
শিব পূরাণে বলা আছে কালো তিল ভেজানো জলে স্নান করলে শরীর শুদ্ধ হয়। বলা হয়, শিবরাত্রি ব্রত পালনের সময় নিজেকে সংযত রাখতে হয় আর তাই স্নান করে উঠে সংকল্প করা জরুরী।
চতুর্দশীর সারাদিন নিজের মন ও শরীরকে শুদ্ধ রাখার জন্য সংকল্প করার কথা বলা হয়। এর জন্য সারাদিন উপবাস রাখতে হবে এবং মনে মনে ওঁ নমঃ শিবায়ঃ মন্ত্র জপ করুন এবং মহাদেব যেন আপনার সংকল্প রক্ষা করেন সেই আশীর্বাদ প্রার্থনা করুন।
মহাদেবকে যেসব উপকরণ সহযোগে পুজো দেবেন....
গঙ্গাজল, দুধ, ঘি, দই, মধু, শ্বেত চন্দন, ধুতরা ফুল, আকন্দ ফুল, বেল পাতা, গোলাপ জল, ধুপ, প্রদীপ, পাঁচটি ফল, কাঁটাফল ও সন্দেশ সহযোগে মহাদেবের পুজো দিন। আজকাল অবশ্য সকলে দুপুর বেলায় শিবলিঙ্গে জল ঢেলে নিয়ে উপবাস ভঙ্গ করেন। কিন্তু মহাশিবরাত্রি নামের মধ্যেই রাতের কথা উল্লেখ রয়েছে। তাই মহাদেবের আশীর্বাদ পেতে রাত্রিবেলা শিবপুজোর আদর্শ সময়। আজও তাই ভোলানাথের থানে সারা রাতভোর ঠাকুরের পুজো হয়।
পূজার অর্ঘ্য নিবেদন করবেন কীভাবে?...
এ তো গেল পুজোর উপকরণ। তবে ভোলা মহেশ্বরকে এইসব পূজার অর্ঘ্য নিবেদন করবেন কীভাবে। শিব পূরাণ অনুসারে শিবলিঙ্গকে বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে স্নান করানোর সময়ে আলাদা আলাদা মন্ত্র উচ্চারণ করার বিধি রয়েছে। অর্থাৎ শিবলিঙ্গে জল ঢালার সময় মন্ত্র আলাদা, দুধ ঢালার সময় আলাদা মন্ত্র এবং অন্যান্য উপকরণ ঢালার সময় আলাদা আলাদা মন্ত্র উচ্চারণ করলে মহাদেব তুষ্ট হন। তাই জেনে নিন কোন উপকরণ দিয়ে মহাদেবকে স্নান করানোর সময় যেসব মন্ত্র জপ করবেন:
প্রথম প্রহরের পূজা:
দুধ দ্বারা স্নানের মন্ত্র:
‘ইদং স্নানীয় দুগ্ধং ওঁ হৌং ঈশানায় নমঃ’
এই মন্ত্রটি বলে শিবকে দুধ দিয়ে স্নান করিয়ে একটি অর্ঘ্য নিবেদনের পরে জল দিয়ে স্নান করাতে হবে।
দ্বিতীয় প্রহরের পূজা:
দই দিয়ে স্নানের মন্ত্র:
‘ইদং স্নানীয় দধিং ওঁ হৌং অঘোরোয় নমঃ’
এই মন্ত্রটি বলে শিবকে দুধ দিয়ে স্নান করিয়ে একটি অর্ঘ্য নিবেদনের পরে জল দিয়ে স্নান করাতে হবে।
তৃতীয় প্রহরের পূজা:
ঘি দিয়ে স্নানের মন্ত্র:
‘ইদং স্নানীয় ঘৃতং ওঁ হৌং বামদেবায় নমঃ’
এই মন্ত্রটি বলে শিবকে দুধ দিয়ে স্নান করিয়ে একটি অর্ঘ্য নিবেদনের পরে জল দিয়ে স্নান করাতে হবে।
চতুর্থ প্রহরের পূজা:
মধু দিয়ে স্নানের মন্ত্র:
‘ইদং স্নানীয় মধুং ওঁ হৌং সদ্যজাতায় নমঃ’
এই মন্ত্রটি বলে শিবকে দুধ দিয়ে স্নান করিয়ে একটি অর্ঘ্য নিবেদনের পরে জল দিয়ে স্নান করাতে হবে।
এইভাবে চারপ্রহর মহাদেবকে স্নান করানোর সময় মহাদেবের কাছ থেকে সৌভাগ্য, সমৃদ্ধি, জ্ঞান, আয়ু, সন্তান, বিদ্যা, অর্থ, আরোগ্য কামনা করুন। এরপর একে একে বেলপাতার মালা, ফুল এবং ফুলের মালা শিবলিঙ্গের ওপর দিন। তারপর লিঙ্গের ওপর চন্দনের প্রলেপ দিন।
ধুপ এবং প্রদীপ জ্বেলে ওম নমঃ শিবায়ঃ জপ করতে করতে মহাদেবের আরতি করুন। এ্ররপর মহাদেবকে পাঁচ ফল এবং মিষ্টি নিবেদন করে বাবার চরণে মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম করুন। এরপর যদি পারেন তাহলে বলবো শিবের ১০৮টি নাম মনে মনে জপ করুন। না জানা থাকলে পাঠও করতে পারেন। মনে রাখবেন, মহাদেব কিন্তু অল্পেতেই তুষ্ট হন, তাই এইভাবে ভক্তি ও নিষ্ঠাভরে মহাদেবের আরাধনা করলে বাবা অবশ্যই আপনার মনের ইচ্ছা পূরণ করবেন।
ওঁ নমঃ শিবায়ং !
No comments:
Post a Comment
পোস্টটি ভালো লাগলে কমেন্ট করুন। আপনার কোন তথ্য সংরক্ষণ বা প্রকাশ করা হবে না। আপনি Anonymous বা পরিচয় গোপন করেও কমেন্ট করতে পারেন।