গত কয়েক বছরের মতো এবারও বছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে পাঠ্যবই তুলে দিয়ে প্রশংসিত হয়েছে সরকার। তবে পাঠ্যবইয়ে অমুসলিম কবি-সাহিত্যিকদের লেখা বাদ দিয়ে ইসলামী ভাবধারার লেখা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।ইসলামী বাংলাদেশ গোড়ার লক্ষ্যে হাসিনা সরকার গত কয়েক বছর ধরে পর্যায়ক্রমে রবীন্দ্রনাথসহ সকল অমুসলিম কবি-সাহিত্যিকদের লেখা বাদ দিয়ে মুসলমান কবি-সাহিত্যিকদের লেখা অন্তর্ভুক্ত করছে।প্রত্যেকে বার কিছু মানুষ প্রতিবাদ করছে। কিন্তু কোন কাজ হয়নি।বরং সরকারের ইসলামী বাংলাদেশ বা শেখ হাসিনার ভাষায় "মদিনা সনদ" বাস্তবায়নের পথ উন্মুক্ত হচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এবছর নবম শ্রেণির বাংলা বই ‘সাহিত্য সংকলন’ থেকে সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পালামৌ’ ও জ্ঞানদাসের ‘সুখের লাগিয়া’, ভারতচন্দ্রের ‘আমার সন্তান’, লালন শাহের ‘সময় গেলে সাধন হবে না’, রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘স্বাধীনতা’ ও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘সাঁকোটা দুলছে’ বাদ দিয়ে যুক্ত করা হয়েছে শাহ মোহাম্মদ সগীরের ‘বন্দনা’, আলাওলের ‘হামদ’, আব্দুল হাকিমের ‘বঙ্গবাণী’, গোলাম মোস্তফার ‘জীবন বিনিময়’ ও কাজী নজরুল ইসলামের ‘উমর-ফারুক’।
অষ্টম শ্রেণির বাংলা দ্রুতপঠন আনন্দপাঠ থেকে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর ‘রামায়ণ-কাহিনি’ বাদ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সপ্তম শ্রেণির বাংলা বই সপ্তবর্ণাতে নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘লাল ঘোড়া’ বাদ দিয়ে যুক্ত করা হয়েছে হবীবুল্লাহ বাহারের ‘মরু ভাস্কর’। অন্যদিকে, ষষ্ঠ শ্রেণির দ্রুতপঠন আনন্দপাঠ থেকে শরৎচন্দ্রের ‘লালু’ ও সত্যেন সেনের ‘লাল গরুটা’ এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বাংলাদেশের হৃদয়’ বাদ দেওয়া হয়েছে।
গত বছরের মে মাসে হেফাজতে ইসলাম প্রধানমন্ত্রী ও জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি জমা দিয়ে এবং ইসলামী ঐক্যজোট সংবাদ সম্মেলন করে পাঠ্যবই ‘সংশোধনে’র দাবি জানিয়েছিলো। ওই সময় অবিলম্বে পাঠ্যবই সংশোধন না হলে আন্দোলনের হুমকি দিয়েছিলো কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড।
সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা, এসব কারণে পাঠ্যবইয়ে এত ব্যাপক পরিবর্তন এনে অমুসলিম কবি-সাহিত্যিকদের লেখা বাদ দেওয়া হয়েছে। যদিও এমন অভিযোগ সত্যি নয় বলে দাবি করেছেন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান নারায়ণ চন্দ্র সাহা। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই অভিযোগ সঠিক নয়। নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই পাঠ্যবই সংশোধন ও পরিমার্জন করা হয়েছে।’
তবে পাঠ্যবই থেকে প্রখ্যাত কবি-সাহিত্যিকদের লেখা বাদ পড়ায় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের অনেকেই ক্ষুব্ধ। এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শিক্ষাব্যবস্থাকে যতদূর সম্ভব গোলমেলে করে ধ্বংস করার জন্যই এটা করা হচ্ছে। এনসিটিবি সম্ভবত বনসাইয়ের মতো করে তৈরি করতে চাচ্ছে শিক্ষার্থীদের। প্রতিটি মানুষই আলাদা। আমাদের যে সংস্কৃতি, তাতে হিন্দু ও মুসলমানকে আলাদা করে দেখার সুযোগ নেই।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলামের কণ্ঠেও ক্ষোভ। তিনি বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক চিন্তা থেকেই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ, মাইকেল মধুসূদন দত্তসহ অনেকের লেখা বাদ দেওয়া হচ্ছে, যাতে তাদের অবদান মানুষ ভুলে যায়। এটা খুব বেদনাদায়ক। আমরা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘এদের ছাড়া বাংলা সাহিত্য কল্পনা করা যায় না। বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ নিদর্শনগুলো বাদ দিয়ে আমরা শিক্ষার্থীদের ভাল সাহিত্য শেখাতে পারবো না। এ ধরনের অপচেষ্টা পাকিস্তান আমলেও হয়েছিলো। সেসময় মহাশ্মশানকে করা হয়েছিলো গোরস্থান। কিন্তু মানুষ তা মেনে নেয়নি। এখন স্বাধীন দেশেও এমন অপচেষ্টা চলছে। তবে মানুষ এবারও মেনে নেবে না।’
এ বিষয়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) বাংলা বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক ড. সফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের শেকড় থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। শুধু অমুসলিম নয়, যারা এ দেশীয় সংস্কৃতি লালন-পালন করেছেন, যাদের শিল্প-সাহিত্যে অবদান আছে তাদের নাম পাঠ্যবই থেকে বাদ দেওয়ার চক্রান্ত চলছে।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরীও এ বিষয়ে চিন্তিত। তিনি বলেন, ‘বাংলা সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা যে ধর্মেরই হোক, তাদের লেখা বাদ দেওয়া বা তাদের অবদান অস্বীকার করা ঠিক হয়নি। তবে বাঙালি সংস্কৃতি অসাম্প্রদায়িক, তাই এ ধরনের অপচেষ্টা কোনও দিন সফল হবে না।’
/এএআর/আপ-টিআর/
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এবছর নবম শ্রেণির বাংলা বই ‘সাহিত্য সংকলন’ থেকে সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পালামৌ’ ও জ্ঞানদাসের ‘সুখের লাগিয়া’, ভারতচন্দ্রের ‘আমার সন্তান’, লালন শাহের ‘সময় গেলে সাধন হবে না’, রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘স্বাধীনতা’ ও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘সাঁকোটা দুলছে’ বাদ দিয়ে যুক্ত করা হয়েছে শাহ মোহাম্মদ সগীরের ‘বন্দনা’, আলাওলের ‘হামদ’, আব্দুল হাকিমের ‘বঙ্গবাণী’, গোলাম মোস্তফার ‘জীবন বিনিময়’ ও কাজী নজরুল ইসলামের ‘উমর-ফারুক’।
অষ্টম শ্রেণির বাংলা দ্রুতপঠন আনন্দপাঠ থেকে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর ‘রামায়ণ-কাহিনি’ বাদ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সপ্তম শ্রেণির বাংলা বই সপ্তবর্ণাতে নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘লাল ঘোড়া’ বাদ দিয়ে যুক্ত করা হয়েছে হবীবুল্লাহ বাহারের ‘মরু ভাস্কর’। অন্যদিকে, ষষ্ঠ শ্রেণির দ্রুতপঠন আনন্দপাঠ থেকে শরৎচন্দ্রের ‘লালু’ ও সত্যেন সেনের ‘লাল গরুটা’ এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বাংলাদেশের হৃদয়’ বাদ দেওয়া হয়েছে।
গত বছরের মে মাসে হেফাজতে ইসলাম প্রধানমন্ত্রী ও জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি জমা দিয়ে এবং ইসলামী ঐক্যজোট সংবাদ সম্মেলন করে পাঠ্যবই ‘সংশোধনে’র দাবি জানিয়েছিলো। ওই সময় অবিলম্বে পাঠ্যবই সংশোধন না হলে আন্দোলনের হুমকি দিয়েছিলো কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড।
সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা, এসব কারণে পাঠ্যবইয়ে এত ব্যাপক পরিবর্তন এনে অমুসলিম কবি-সাহিত্যিকদের লেখা বাদ দেওয়া হয়েছে। যদিও এমন অভিযোগ সত্যি নয় বলে দাবি করেছেন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান নারায়ণ চন্দ্র সাহা। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই অভিযোগ সঠিক নয়। নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই পাঠ্যবই সংশোধন ও পরিমার্জন করা হয়েছে।’
তবে পাঠ্যবই থেকে প্রখ্যাত কবি-সাহিত্যিকদের লেখা বাদ পড়ায় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের অনেকেই ক্ষুব্ধ। এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শিক্ষাব্যবস্থাকে যতদূর সম্ভব গোলমেলে করে ধ্বংস করার জন্যই এটা করা হচ্ছে। এনসিটিবি সম্ভবত বনসাইয়ের মতো করে তৈরি করতে চাচ্ছে শিক্ষার্থীদের। প্রতিটি মানুষই আলাদা। আমাদের যে সংস্কৃতি, তাতে হিন্দু ও মুসলমানকে আলাদা করে দেখার সুযোগ নেই।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলামের কণ্ঠেও ক্ষোভ। তিনি বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক চিন্তা থেকেই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ, মাইকেল মধুসূদন দত্তসহ অনেকের লেখা বাদ দেওয়া হচ্ছে, যাতে তাদের অবদান মানুষ ভুলে যায়। এটা খুব বেদনাদায়ক। আমরা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘এদের ছাড়া বাংলা সাহিত্য কল্পনা করা যায় না। বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ নিদর্শনগুলো বাদ দিয়ে আমরা শিক্ষার্থীদের ভাল সাহিত্য শেখাতে পারবো না। এ ধরনের অপচেষ্টা পাকিস্তান আমলেও হয়েছিলো। সেসময় মহাশ্মশানকে করা হয়েছিলো গোরস্থান। কিন্তু মানুষ তা মেনে নেয়নি। এখন স্বাধীন দেশেও এমন অপচেষ্টা চলছে। তবে মানুষ এবারও মেনে নেবে না।’
এ বিষয়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) বাংলা বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক ড. সফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের শেকড় থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। শুধু অমুসলিম নয়, যারা এ দেশীয় সংস্কৃতি লালন-পালন করেছেন, যাদের শিল্প-সাহিত্যে অবদান আছে তাদের নাম পাঠ্যবই থেকে বাদ দেওয়ার চক্রান্ত চলছে।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরীও এ বিষয়ে চিন্তিত। তিনি বলেন, ‘বাংলা সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা যে ধর্মেরই হোক, তাদের লেখা বাদ দেওয়া বা তাদের অবদান অস্বীকার করা ঠিক হয়নি। তবে বাঙালি সংস্কৃতি অসাম্প্রদায়িক, তাই এ ধরনের অপচেষ্টা কোনও দিন সফল হবে না।’
/এএআর/আপ-টিআর/
রবীন্দ্রনাথের লেখা বাদ দেওয়া ঠিক হয়েছে কারণ রবীন্দ্রনাথ পূর্ববঙ্গের একনিষ্ঠ বিরোধী ছিল। সে কখনো চায়নি যে পূর্ব বাংলা উন্নত হোক।
ReplyDeleteএর প্রমাণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরোধিতা।
ReplyDelete