সোমনাথের প্রথম মন্দিরটি খ্রিস্টের জন্মের আগে থেকে বিদ্যমান ছিল। গুজরাটের বল্লভীর যাদব রাজারা ৬৪৯ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় মন্দিরটি নির্মাণ করে দেন। ৭২৫ খ্রিস্টাব্দে সিন্ধের আরব শাসনকর্তা জুনায়েদ তাঁর সৈন্যবাহিনী পাঠিয়ে এই মন্দিরটি ধ্বংস করে দেন। তারপর ৮১৫ খ্রিস্টাব্দে গুজ্জর প্রতিহার রাজা দ্বিতীয় নাগভট্ট সোমনাথের তৃতীয় মন্দিরটি নির্মাণ করান। এই মন্দিরটি ছিল লাল বেলেপাথরে নির্মিত সুবিশাল একটি মন্দির।
১০২৪ খ্রিস্টাব্দে মামুদ গজনি আরেকবার মন্দিরটি ধ্বংস করেন। ১০২৬ থেকে ১০৪২ খ্রিস্টাব্দের মাঝে কোনো এক সময়ে গুজ্জর পরমার রাজা মালোয়ার ভোজ ও সোলাঙ্কি রাজা আনহিলওয়ারার প্রথম ভীমদেব আবার মন্দিরটি নির্মাণ করান। এই মন্দিরটি ছিল কাঠের তৈরি। কুমারপাল (রাজত্বকাল ১১৪৩-৭২) কাঠের বদলে একটি পাথরের মন্দির তৈরি করে দেন।
১২৯৬ খ্রিস্টাব্দে সুলতান আলাউদ্দিন খিলজির সৈন্যবাহিনী পুনরায় মন্দিরটি ধ্বংস করে।হাসান নিজামির তাজ-উল-মাসির লিখেছেন, গুজরাটের রাজা করণ পরাজিত হন, তাঁর সেনাবাহিনী পলায়ন করে, "পঞ্চাশ হাজার কাফেরকে তরবারির আঘাতে নরকে নিক্ষেপ করা হয়" এবং "বিজয়ীদের হাতে আসে কুড়ি হাজারেরও বেশি ক্রীতদাস ও অগণিত গবাদি পশু"।১৩০৮ খ্রিস্টাব্দে সৌরাষ্ট্রের চূড়াসম রাজা মহীপাল দেব আবার মন্দিরটি নির্মাণ করান। তাঁর পুত্র খেঙ্গর ১৩২৬ থেকে ১৩৫১ সালের মাঝে কোনো এক সময়ে মন্দিরে শিবলিঙ্গটি প্রতিষ্ঠা করেন।
১৩৭৫ খ্রিস্টাব্দে গুজরাটের সুলতান প্রথম মুজফফর শাহ আবার মন্দিরটি ধ্বংস করেন। মন্দিরটি পুনর্নির্মিত হলে ১৪৫১ খ্রিস্টাব্দে গুজরাটের সুলতান মাহমুদ বেগদা আবার এটি ধ্বংস করে দেন।
কিন্তু এবারও মন্দিরটি পুনর্নির্মিত হয়। ১৭০১ খ্রিস্টাব্দে মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব মন্দিরটি ধ্বংস করেন।আওরঙ্গজেব সোমনাথ মন্দিরের জায়গায় একটি মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। এই মসজিদে হিন্দু শাস্ত্র-ভিত্তিক মোটিফগুলি সম্পূর্ণ ঢাকা পড়েনি।
পরে ১৭৮৩ সালে পুণের পেশোয়া, নাগপুরের রাজা ভোঁসলে, কোলহাপুরের ছত্রপতি ভোঁসলে, ইন্দোরের রানি অহল্যাবাই হোলকর ও গোয়ালিয়রের শ্রীমন্ত পাতিলবুয়া সিন্ধের যৌথ প্রচেষ্টায় মন্দিরটি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। তবে মূল মন্দিরটি মসজিদে পরিণত হওয়ায় সেই জায়গায় মন্দির প্রতিষ্ঠা করা যায় নি। মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ধ্বংসাবশেষের পাশে।
আসারু-ল-বিলাদ
নিচের উদ্ধৃতিটি তেরো শতকের আরব ভূগোলবিদ আসারু-ল-বিলাদের লেখা ওয়ান্ডারস অফ থিংস ক্রিয়েটেড, অ্যান্ড মার্ভেলস অফ থিংস এক্সিস্টিং বই থেকে নেওয়া। এতে সোমনাথ মন্দির ও তার ধ্বংসের বিবরণ পাওয়া যায়:
“সোমনাথ: ভারতের বিখ্যাত শহর, সমুদ্রের উপকূলে অবস্থিত এবং সমুদ্রের তরঙ্গবিধৌত। এই স্থানের বিস্ময়কর স্থানগুলির মধ্যে একটি হল এক মন্দির যেখানে সোমনাথ নামে একটি বিগ্রহ রয়েছে। বিগ্রহটি মন্দিরের মাঝখানে নিচের কোনোরকম ঠেকনা ছাড়াই উপর থেকে ঝুলে রয়েছে। হিন্দুরা এটিকে খুব শ্রদ্ধা করে। বিগ্রহটিকে ওভাবে ঝুলতে দেখে মুসলমানই হোক, আর কাফেরই হোক, সবাই আশ্চর্য হয়ে যায়। চন্দ্রগ্রহণের দিন হিন্দুরা এই মন্দিরে তীর্থ করতে আসে। সেই সময় লক্ষ লক্ষ লোক এই মন্দিরে ভিড় জমান।"
“সুলতান ইয়ামিনু-দ দৌলা মাহমুদ বিন সুবুক্তিগিন ভারতের বিরুদ্ধে ধর্মযুদ্ধ ঘোষণা করলেন। তিনি ভেবেছিলেন সোমনাথ ধ্বংস করে দিলেই হিন্দুদের মুসলমান করা যাবে। তাই তিনি সোমনাথ ধ্বংস করার ব্যাপারে বিশেষভাবে যত্নবান হন। এর ফলে হাজার হাজার হিন্দুকে জোর করে মুসলমান করা হয়। তিনি ৪১৬ হিজরির জিল্কাদা মাসের মাঝামাঝি সময় (১০২৫ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে) এসেছিলেন।
"বিহগ্রের দিকে সুলতান আশ্চর্য হয়ে চেয়ে রইলেন। তারপর লুটের মাল নিয়ে যাওয়ার হুকুম দিলেন। ধনসম্পদ তাঁর খুব পছন্দ হয়েছিল। সেখানে সোনা ও রুপো দিয়ে তৈরি অনেক মূর্তি ছিল। রত্নখচিত অনেক পাত্র ছিল। ভারতের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা সেসব জিনিস সেই মন্দিরে পাঠিয়েছিলেন। মন্দির থেকে লুণ্ঠিত দ্রব্যের মোট অর্থমূল্য ছিল কুড়ি হাজার দিনারেরও বেশি।" By : Wikipedia
১০২৪ খ্রিস্টাব্দে মামুদ গজনি আরেকবার মন্দিরটি ধ্বংস করেন। ১০২৬ থেকে ১০৪২ খ্রিস্টাব্দের মাঝে কোনো এক সময়ে গুজ্জর পরমার রাজা মালোয়ার ভোজ ও সোলাঙ্কি রাজা আনহিলওয়ারার প্রথম ভীমদেব আবার মন্দিরটি নির্মাণ করান। এই মন্দিরটি ছিল কাঠের তৈরি। কুমারপাল (রাজত্বকাল ১১৪৩-৭২) কাঠের বদলে একটি পাথরের মন্দির তৈরি করে দেন।
১২৯৬ খ্রিস্টাব্দে সুলতান আলাউদ্দিন খিলজির সৈন্যবাহিনী পুনরায় মন্দিরটি ধ্বংস করে।হাসান নিজামির তাজ-উল-মাসির লিখেছেন, গুজরাটের রাজা করণ পরাজিত হন, তাঁর সেনাবাহিনী পলায়ন করে, "পঞ্চাশ হাজার কাফেরকে তরবারির আঘাতে নরকে নিক্ষেপ করা হয়" এবং "বিজয়ীদের হাতে আসে কুড়ি হাজারেরও বেশি ক্রীতদাস ও অগণিত গবাদি পশু"।১৩০৮ খ্রিস্টাব্দে সৌরাষ্ট্রের চূড়াসম রাজা মহীপাল দেব আবার মন্দিরটি নির্মাণ করান। তাঁর পুত্র খেঙ্গর ১৩২৬ থেকে ১৩৫১ সালের মাঝে কোনো এক সময়ে মন্দিরে শিবলিঙ্গটি প্রতিষ্ঠা করেন।
১৩৭৫ খ্রিস্টাব্দে গুজরাটের সুলতান প্রথম মুজফফর শাহ আবার মন্দিরটি ধ্বংস করেন। মন্দিরটি পুনর্নির্মিত হলে ১৪৫১ খ্রিস্টাব্দে গুজরাটের সুলতান মাহমুদ বেগদা আবার এটি ধ্বংস করে দেন।
কিন্তু এবারও মন্দিরটি পুনর্নির্মিত হয়। ১৭০১ খ্রিস্টাব্দে মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব মন্দিরটি ধ্বংস করেন।আওরঙ্গজেব সোমনাথ মন্দিরের জায়গায় একটি মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। এই মসজিদে হিন্দু শাস্ত্র-ভিত্তিক মোটিফগুলি সম্পূর্ণ ঢাকা পড়েনি।
পরে ১৭৮৩ সালে পুণের পেশোয়া, নাগপুরের রাজা ভোঁসলে, কোলহাপুরের ছত্রপতি ভোঁসলে, ইন্দোরের রানি অহল্যাবাই হোলকর ও গোয়ালিয়রের শ্রীমন্ত পাতিলবুয়া সিন্ধের যৌথ প্রচেষ্টায় মন্দিরটি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। তবে মূল মন্দিরটি মসজিদে পরিণত হওয়ায় সেই জায়গায় মন্দির প্রতিষ্ঠা করা যায় নি। মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ধ্বংসাবশেষের পাশে।
আসারু-ল-বিলাদ
নিচের উদ্ধৃতিটি তেরো শতকের আরব ভূগোলবিদ আসারু-ল-বিলাদের লেখা ওয়ান্ডারস অফ থিংস ক্রিয়েটেড, অ্যান্ড মার্ভেলস অফ থিংস এক্সিস্টিং বই থেকে নেওয়া। এতে সোমনাথ মন্দির ও তার ধ্বংসের বিবরণ পাওয়া যায়:
“সোমনাথ: ভারতের বিখ্যাত শহর, সমুদ্রের উপকূলে অবস্থিত এবং সমুদ্রের তরঙ্গবিধৌত। এই স্থানের বিস্ময়কর স্থানগুলির মধ্যে একটি হল এক মন্দির যেখানে সোমনাথ নামে একটি বিগ্রহ রয়েছে। বিগ্রহটি মন্দিরের মাঝখানে নিচের কোনোরকম ঠেকনা ছাড়াই উপর থেকে ঝুলে রয়েছে। হিন্দুরা এটিকে খুব শ্রদ্ধা করে। বিগ্রহটিকে ওভাবে ঝুলতে দেখে মুসলমানই হোক, আর কাফেরই হোক, সবাই আশ্চর্য হয়ে যায়। চন্দ্রগ্রহণের দিন হিন্দুরা এই মন্দিরে তীর্থ করতে আসে। সেই সময় লক্ষ লক্ষ লোক এই মন্দিরে ভিড় জমান।"
“সুলতান ইয়ামিনু-দ দৌলা মাহমুদ বিন সুবুক্তিগিন ভারতের বিরুদ্ধে ধর্মযুদ্ধ ঘোষণা করলেন। তিনি ভেবেছিলেন সোমনাথ ধ্বংস করে দিলেই হিন্দুদের মুসলমান করা যাবে। তাই তিনি সোমনাথ ধ্বংস করার ব্যাপারে বিশেষভাবে যত্নবান হন। এর ফলে হাজার হাজার হিন্দুকে জোর করে মুসলমান করা হয়। তিনি ৪১৬ হিজরির জিল্কাদা মাসের মাঝামাঝি সময় (১০২৫ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে) এসেছিলেন।
"বিহগ্রের দিকে সুলতান আশ্চর্য হয়ে চেয়ে রইলেন। তারপর লুটের মাল নিয়ে যাওয়ার হুকুম দিলেন। ধনসম্পদ তাঁর খুব পছন্দ হয়েছিল। সেখানে সোনা ও রুপো দিয়ে তৈরি অনেক মূর্তি ছিল। রত্নখচিত অনেক পাত্র ছিল। ভারতের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা সেসব জিনিস সেই মন্দিরে পাঠিয়েছিলেন। মন্দির থেকে লুণ্ঠিত দ্রব্যের মোট অর্থমূল্য ছিল কুড়ি হাজার দিনারেরও বেশি।" By : Wikipedia
No comments:
Post a Comment
পোস্টটি ভালো লাগলে কমেন্ট করুন। আপনার কোন তথ্য সংরক্ষণ বা প্রকাশ করা হবে না। আপনি Anonymous বা পরিচয় গোপন করেও কমেন্ট করতে পারেন।