মঙ্গল শোভাযাত্রার ইতিহাস - UHC বাংলা

UHC বাংলা

...মুক্ত চিন্তায় বিশ্বাসী একটি গ্লোবাল বাংলা প্লাটফর্ম!

ব্রেকিং নিউজ

Home Top Ad

Wednesday, April 3, 2019

মঙ্গল শোভাযাত্রার ইতিহাস

মঙ্গল শোভাযাত্রা বাংলা নববর্ষের দিনে অর্থাৎ বাংলা বছরের প্রথম দিনে উজ্জাপিত হয়।নববর্ষের সমগ্র বাংলা বাংলা থেকে শুরু করে শহরের ওলি-গোলি মেতে ওঠে নতুন বছরকে বরণ আনন্দে।বাংলা নববর্ষ আমাদের হাজার হাজার বছরের ঐতিহ্য।কিন্তু মঙ্গল শোভাযাত্রা আমাদের সংস্কৃতিতে এক নতুন সংযোজন।মঙ্গল শোভাযাত্রার বয়স প্রায় ৪০ বছর। এই অনুষ্ঠানের গোড়াপত্তন হয় বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে। আরো পরিষ্কার ভাবে বলা যেতে পারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে। এই অনুষ্ঠান রাজনৈতিক ভাবে শুরু হলেও এটি এখন সর্বজন স্বীকৃত একটি সামাজিক অনুষ্ঠান।১৯৮৯ সালে বাংলাদেশের ততকালীন এরশাদ সরকারের স্বৈরাচারী শাসনের বিরূদ্ধে সাধারণ মানুষের ঐক্য এবং একই সঙ্গে শান্তির বিজয় ও অপশক্তির অবসান কামনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউট  প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করে।এই শোভাযাত্রার অন্যতম আকর্ষণ হলো চারুকলা ইন্সটিটিউটের ছাত্র-ছাত্রী-শিক্ষকবৃন্দ একই সঙ্গে বিশালকায় চারুশিল্প যেমন পুতুল, হাতি, কুমীর, লক্ষ্মীপেঁচা, ঘোড়াসহ বিচিত্র মুখোশ এবং সাজসজ্জ্বা, বাদ্যযন্ত্র ও নৃত্য সহকারে বিশাল আনন্দ মিছিল বের করে। প্রথম বছরের এই মঙ্গল শোভাযাত্রা সাধারণ মানুষের মনে ব্যাপক ভাবে সাড়া দেয়। 

Photo: champs21.com


প্রথম দিকে এই শোভাযাত্রার নাম ছিল বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা। ১৯৯৬ সাল থেকে চারুকলার এই আনন্দ শোভাযাত্রা মঙ্গল শোভাযাত্রা হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু ঢাকায় বলা হলেও আসলে এর শুরুটা ঢাকায় ছিল না।মঙ্গল শোভাযাত্রা প্রথম উজ্জাপিত বাংলাদেশের পুরানো এবং সাংস্কৃতিক শহর যশোরে ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে।চারুপীঠ নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যশোরে প্রথমবারের মতো নববর্ষ উপলক্ষে আনন্দ শোভাযাত্রার আয়োজন করে। ঐ শোভাযাত্রা অনেকের মনে আলোড়ন সৃষ্টি করে।তাই যশোরের ঐ আনন্দ শোভাযাত্রা অনুকরণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট ১৯৮৯ সালে ঢাকায় এই শোভাযাত্রা শুরু করে। মঙ্গল শোভাযাত্রা জনপ্রিয়তার তুঙ্গে ওঠে ১৯৯১ সালে। ঐ বছর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিল্পী সংগঠন, কবি-সাহিত্যিক, বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দ এই শোভাযাত্রার সাথে একাত্মা ঘোষণা করেন। শোভাযাত্রায় স্থান পায় বিশালকায় হাতি, বাঘের প্রতিকৃতির কারুকর্ম। কৃত্রিম ঢাক আর অসংখ্য মুখোশখচিত প্ল্যাকার্ডসহ মিছিলটি নাচে গানে উৎফুল্ল পরিবেশ সৃষ্টি করে। ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে আনন্দ শোভাযাত্রার সম্মুখে রং বেরংয়ের পোশাক পরিহিত ছাত্র-ছাত্রীদের কাঁধে ছিল বিরাট আকারের কুমির। বাঁশ এবং বহু বর্ণের কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল কুমিরটি।বর্তমানে বাংলা সংস্কৃতির পরিচয়বাহী নানা প্রতীকী উপকরণ, বিভিন্ন রঙ-এর মুখোশ ও বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিকৃতি নিয়ে হাজার হাজার মানুষ জমায়েত হয় মঙ্গল শোভাযাত্রায়। তবে একবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশক থেকে প্রায় প্রতি জেলাসদরে এবং বেশ কিছু উপজেলা সদরে পহেলা বৈশাখে ‘‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’’ আয়োজিত হওয়ায় ‘‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’’ বাংলাদেশের নবতর সর্বজনীন সংস্কৃতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।এটি সেক্যুলার বাংলাদেশের পরিচয় বহন করে।বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আবেদনক্রমে ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের ৩০শে নভেম্বর বাংলাদেশের ‘‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’’ জাতিসংঘ সংস্থা ইউনেস্কোর মানবতার অধরা বা অস্পর্শনীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান লাভ করে।

 মঙ্গল শোভাযাত্রায় ঢাকায় জনসমুদ্র।  ছবিঃ dhakatimes24.com
  তবে বাংলাদেশের মৌলবাদীরা কখন বর্ষবরণ অনুষ্ঠানকে ভালো চোখে দেখেনি। বাংলাদেশের বিভিন্ন বিখ্যাত মাওলানারা পয়লা বৈশাখ কে কবর দেয়ার ওয়াজ   ( লিংকে ক্লিক করে দেখুন) করে থাকে। ১৯৯৯ সালের যশোরের টাউন হল মাঠে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর দ্বাদশ জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠানে বাউল গানের আসরে দুই দফা বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় ইসলামী জঙ্গিরা। ১০ জন সাংস্কৃতিক কর্মী ও দর্শক প্রাণ হারানোর পাশাপাশি আহত হন আরো অগণিত মানুষ। নিহতরা হলেন নূর ইসলাম, নাজমুল হুদা তপন, সন্ধ্যা রানী ঘোষ, ইলিয়াস মুন্সী, শাহ আলম বাবুল, বুলু, রতন রায়, বাবুল সূত্রধর, শাহ আলম ও রামকৃষ্ণ। এছাড়া ২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল তারিখে (বাংলা ১৪০৮ সনের পহেলা বৈশাখ) রমনার বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটায়।নৃশংস হত্যাকান্ডটিতে ১০ জন নিহত হওয়ার পাশাপাশি বহু মানুষ আহত হয়।ঘটনাস্থলে নিহতরা হলেন চট্টগ্রামের আবুল কালাম আজাদ(৩৫), বরগুনার মোঃ জসীম (২৩), ঢাকার হাজারীবাগের এমরান (৩২), পটুয়াখালীর অসীম চন্দ্র সরকার (২৫), পটুয়াখালীর মোঃ মামুন, ঢাকার দোহারের আফসার (৩৪), নোয়াখালীর ইসমাইল হোসেন ওরফে স্বপন (২৭), পটুয়াখালীর শিল্পী (২০) ও অজ্ঞাত একজন।এতো হামলা স্বত্বেও বাংলাদেশে বর্ষবরণ অনুষ্ঠিত হয় ব্যাপক আনন্দে। আর তার সাহতে মঙ্গল শোভাযাত্রা নতুন মাত্রা যোগ করেছে। 

1 comment:

  1. সুনিতা ঠাকুরApril 3, 2019 at 9:26 PM

    ওয়াও! আমি কলকাতায় বসবাস করি। আমি জানতাম না বাংলাদেশের মানুষ জঙ্গিদের উফেক্ষা এতো সুন্দর অনুষ্ঠান করতে পারে। মন চায় ঘুরে আসি।

    ReplyDelete

পোস্টটি ভালো লাগলে কমেন্ট করুন। আপনার কোন তথ্য সংরক্ষণ বা প্রকাশ করা হবে না। আপনি Anonymous বা পরিচয় গোপন করেও কমেন্ট করতে পারেন।

অন্যান্য

Post Bottom Ad

আকর্ষণীয় পোস্ট

code-box