বাংলাদেশের রাজবাড়ীতে মন্দিরের সামনে বসে গাঁজা সেবন ও প্রস্রাব করতে নিষেধ করায় ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিমা ভাংচুর করেছে মাদকসেবীরা।
বৃহস্পতিবার (২১ মে) রাতে সদর উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের লক্ষণদিয়া (কাতলাগাড়ি) গ্রামের নমপাড়া সার্বজনীন কালি মন্দিরে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় শুক্রবার (২২ মে) রাতে রাজবাড়ী সদর থানায় মামলা দায়ের করেছেন ওই মন্দির কমিটির সদস্য দুর্জয় মন্ডল। মামলায় লক্ষণদিয়া গ্রামের জোনাব আলীর ছেলে রাকিব (২২) কে আসামি করা হয়েছে।
মন্দির কমিটির সদস্য দুর্জয় মন্ডল বলেন, ‘আমাদের গ্রামের জোনাব আলীর ছেলে রাকিব ও সুজনের ছেলে সজীবসহ কিছু উশৃঙ্খল যুবক প্রায়ই আমাদের মন্দিরের সামনে বসে গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদক সেবন করে। মন্দিরের সামনে মাদক সেবন করার প্রতিবাদ করায় ছয় মাস আগে একবার মন্দিরের প্রতিমা ভাংচুর করেছিলো মাদকসেবীরা। বৃহস্পতিবার (২১ মে) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে আমি মন্দিরের সামনে এসে দেখি রাকিব ও সজীব মন্দিরের সিড়িতে বসে গাঁজা সেবন করছে। এ সময় আমি তাদের গাঁজা সেবন করতে নিষেধ করলে সজীব সেখান থেকে উঠে বাড়ি চলে যায়। কিন্তু রাকিব মন্দিরের সামনেই প্রস্রাব করতে বসে। তখন আমি তাকে প্রস্রাব করতে নিষেধ করলে সে আমার উপর চড়াও হয়। এক পর্যায়ে আমি সেখান থেকে এসে আমাদের সমাজের মাতবর প্রভাত ও সঞ্জীবের কাছে ঘটনাটি খুলে বলি। প্রভাত ও সঞ্জীব গিয়ে ঘটনাটি রাকিবের বাবা জোনাব আলীকে জানায়। এরপর আমি রাত সাড়ে ৭ টার দিকে মন্দিরের সামনে দিয়ে আমাদের কাতলাগারি বাজারে যাওয়ার সময় দেখি মন্দিরের পাঁচটি প্রতিমা ভাঙা অবস্থায় রয়েছে। সেসময় আমি বাজারে অবস্থান করা আমাদের সমাজের মাতবরদের কাছে ঘটনাটি বলার জন্য দ্রুত বাজারে যাই। বাজারে যাওয়া মাত্রই জোনাব আলী ও তার ছেলে রাকিব আমাকে মারধর শুরু করে। তখন বাজরের লোকজন আমাকে তাদের হাত থেকে রক্ষা করে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। আমি শতভাগ নিশ্চিত মন্দিরের সামনে গাঁজা সেবন ও প্রস্রাব করতে নিষেধ করায় রাকিবসহ কিছু মাদকসেবী মন্দিরের প্রতিমা ভাংচুর করেছে। এ ঘটনায় আমি রাজবাড়ী সদর থানায় রাকিবের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছি।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য আ. সালাম শেখ বলেন, ‘বৃহস্পতিবার (২১ মে) রাত ৮টার দিকে আমি মন্দিরের প্রতিমা ভাংচুরের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে দেখি পাঁচটি প্রতিমা ভাঙা অবস্থায় আছে। এই ন্যাক্কারজনক ঘটনাটি যারা ঘটিয়েছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’
সুলতানপুর ইউনিয়ন পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি প্রভাষ চন্দ্র দাস বলেন, ‘নমপাড়া সার্বজনীন কালি মন্দিরের সামনে বসে প্রায়ই এলাকার উশৃঙ্খল কিছু যুবক গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদক সেবন করে। মন্দির কমিটির লোকজন আমাদের কাছে বেশ কয়েকবার এমন অভিযোগ করেছেন। আমরা বিষয়টি ইউপি চেয়ারম্যান এবং স্থানীয় মেম্বারকে বার বার বলেছি সুষ্ঠু পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য। কিন্তু তারা কোন পদক্ষেপ নেননি। বৃহস্পতিবার (২১ মে) রাতে মন্দির কমিটির সদস্য দুর্জয় মন্দিরের সামনে দুই যুবককে গাঁজা খেতে ও প্রস্রাব করতে দেখে নিষেধ করলে তারা ক্ষুব্ধদ হয়ে প্রতিমা ভাংচুর করেছে। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি এবং সংখ্যালঘু পরিবারগুলোকে যেন আর কখনো এমন ঘটনার সম্মুখীন হতে না হয় এরজন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’
রাজবাড়ী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) স্বপন কুমার মজুমদার বলেন, ‘সুলতানপুর ইউনিয়নের লক্ষণদিয়া (কাতলাগাড়ি) গ্রামের নমপাড়া সার্বজনীন কালি মন্দিরের প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। আসামি পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’
নিউজ ক্রেডিট- rajbarinews24.com
No comments:
Post a Comment
পোস্টটি ভালো লাগলে কমেন্ট করুন। আপনার কোন তথ্য সংরক্ষণ বা প্রকাশ করা হবে না। আপনি Anonymous বা পরিচয় গোপন করেও কমেন্ট করতে পারেন।