![]() |
নোয়াখালী গণহত্যা |
(১) ঘটনার স্থানের উল্লেখ [পরে থানার উল্লেখ অনুমোদিত হইয়াছিল।]
(২) ঘটনায় মৃত অথবা আহত ব্যক্তিদের আঘাত বা মৃত্যুর কারণের উল্লেখ
(৩) আক্রান্ত বা আক্রমণকারী ব্যক্তিদের নাম বা সম্প্রদায়ের উল্লেখ
(৪) দেবস্থান বা পূজার বস্তু অপবিত্র করার বর্ণনা
(৫) ঘটনার এবং ঘটনায় মৃত ও আহত ব্যক্তিগণের ফটো বা অন্য কোনোরূপ চিত্র।
ইহা ছাড়া আরও একটি বিষয় নিষিদ্ধ হয়, খবরের হেডিংএর হতাহতের সংখ্যার উল্লেখ। এই সমস্ত নিষেধ-বিধান কেবল সংবাদপত্রে প্রাপ্ত সংবাদের উপর প্রযোজ্য হইবে, কিন্তু গভর্ণমেন্ট স্বীয় অভিপ্রায়ানুরূপ যে কোনো সংবাদ প্রকাশ করিতে পারিবেন, তাহাতে ইহা প্রযোজ্য হইবে না। আদেশের খসড়াটি পড়িয়া মিঃ সুরাবর্দী উহার সম্বন্ধে উপস্থিত সম্পাদকগণের মতামত জানিতে চাহিলেন।
মিঃ সুরাবর্দী—“কেন বলিবেন না?”
বলিলাম—“আমার মনে হইতেছে, পূর্ববঙ্গে যে সকল অত্যাচার কাণ্ড ঘটিতেছে এবং যাহা ঘটিতে যাইতেছে তাহা চাপা দিবার জন্যই আপনার এই আদেশের ব্যবস্থা।”
এই কথা শুনিয়া মিঃ সুরাবর্দী রুষ্ট হইয়া উঠিলেন, বলিলেন, “আপনি একটা দায়িত্বপূর্ণ পদে রহিয়াছেন, আর আপনি আমার আদেশের এই কদৰ্থ করিতেছেন?”
উত্তরে বলিলাম, “আপনি একটি প্রকাশিত ঘটনার বিবরণ দেখান ; পশ্চিমবঙ্গে মুসলমানের উপর কোন অত্যাচার হইলে আপনার দলীয় সংবাদপত্রসমূহ কখনই তাহা প্রকাশ করিতে ছাড়িত না।”
মিঃ সুরাবর্দী—“প্রকাশিত হয় নাই বটে কিন্তু স্থানীয় লোকেরা আমাকে খবর দিয়া গিয়াছে।”
মিঃ মার্টিনকে লক্ষ্য করিয়া বলিলাম –“মিঃ মার্টিন, আপনার ডিপার্টমেন্ট এইরূপ ঘটনার কোন রিপোর্ট আসিয়াছে কি ?”
তিনি বলিলেন—“না, তবে, লোকে আমাকে বলিয়া গিয়াছে।”
উত্তর বলিলাম—“মিঃ মার্টিন, আপনার হাতে কোন রিপোর্ট নাই, তত্ৰাচ যদি আপনি বলেন যে পশ্চিমবঙ্গে এইরূপ ঘটনা ঘটিয়াছে তাহা হইলে আমি বলি আপনি যে পদ অধিকার করিয়া আছেন তাহার যোগ্যতা আপনার নাই।”
মিঃ সুরাবর্দী বলিলেন, “এই আদেশ যদি জারী হইতে পারে তাহা হইলে তিন দিনের মধ্যেই স্বাভাবিক অবস্থা ফিরাইয়া আনিতে পারিব।” এই আদেশই ২৯শে সেপ্টেম্বর তারিখে ভারতরক্ষা আইনের বিধানানুযায়ী বিশেষ আদেশরূপে জারী হয়।
ন্যূনপক্ষে ২১ খানি পত্রিকার [আনন্দবাজার পত্রিকা, হিন্দুস্থান ষ্টাণ্ডার্ড, দেশ, অমৃতবাজার পত্রিকা, যুগান্তর, বসুমতী, ভারত ইষ্টার্ণ এক্সপ্রেস, কৃষক, মাতৃভূমি, এ্যাডভ্যান্স, বিশ্বমিত্র, লোকমান্য, জাগৃতি, জয়হিন্দ, প্রত্যহ, ন্যাশনালিষ্ট, উষা, নবযুগ, স্বাধীনতা, দেশদর্পণ।] প্রকাশ স্থগিত থাকে। ইতিমধ্যে ঘটনার গতি দ্রুতবেগে অগ্রসর হয় এবং নূতন ঘটনার উদ্ভব হইতে থাকে। কয়েকদিন এইরূপ চলিলে লোকের মধ্যে দারুণ উৎকণ্ঠা দেখা দেয়। তাহার ফলে সংবাদপত্রের সম্পাদক ও পরিচালকগণ পত্রিকা পুনঃপ্রকাশের জন্য জনসাধারণের পক্ষ হইতে বিশেষভাবে অনুরুদ্ধ হন। ৬ই অক্টোবর পুনরায় তাঁহারা এক সভায় সমবেত হইয়া পত্রিকা প্রকাশের সিদ্ধান্ত করেন। স্থির হয়, সরকারী নিয়ন্ত্ৰণাদেশে প্রেস এ্যাডভাইসরী কমিটিকে যে ক্ষমতা দেওয়া হইয়াছে তাহা কাৰ্যতঃ পরীক্ষা করিয়া দেখতে হইবে।
কলিকাতার সরকারী মহলে সংবাদ লইয়া জানা গেল যে, উপদ্রুত অঞ্চলে সৈন্য ও সশস্ত্র পুলিশ প্রেরণ করা হইয়াছে। সমগ্র রামগঞ্জ থানা এবং লক্ষ্মীপুর থানা, রায়পুর থানা, সেনবাগ থানা, ফেণী থানা, ছাগলনাইয়া থানা, সন্দ্বীপ থানা ও বেগমগঞ্জ থানার কিয়দংশ উপদ্রুত অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত।”(ক্রমশ)
No comments:
Post a Comment
পোস্টটি ভালো লাগলে কমেন্ট করুন। আপনার কোন তথ্য সংরক্ষণ বা প্রকাশ করা হবে না। আপনি Anonymous বা পরিচয় গোপন করেও কমেন্ট করতে পারেন।