বিস্ময়কর বলে মনে হলেও বিজ্ঞানসম্মত কিছু তথ্য, যেখানে ধর্ম আর বিজ্ঞান পরস্পরের মেলবন্ধনে একত্রে মিলেমিশে সব একাকার হয়ে গেছে । তাই ঋষিযুগীয় সংস্কৃতি ও সৃষ্টি তা সে সাহিত্য, বিজ্ঞান, দর্শন, গণিত, রসায়ন ও চিকিৎসা যাই হোক না কেন, সমস্ত কিছুরই চরম বিকাশ ঘটেছিল যা আজ সারা বিশ্বের গবেষণার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে । এবার নিচের মন্দিরগুলির দিকে খেয়াল করুন:
👇
১। কেদারনাথ, উত্তরাখন্ড।
২। কালহস্তী, অন্ধ্রপ্রদেশ।
৩। একাম্বরনাথ, কাঞ্চি।
৪। থিরুবনমালী।
৫। থিরুবনইকবাল।
৬। চিদাম্বরম নটরাজ।
৭। রামেশ্বরম।
৮। কালেশ্বরম, তেলেঙ্গানা, উত্তর ভারত।
কোন সম্পর্ক খুঁজে পেলেন কি ? কোন সম্পর্ক এদের মধ্যে আদৌ আছে কিনা, ধারনা করতে পারেন ? একটা সম্পর্ক হল এগুলো সবই শিব মন্দির। আর কোন সম্পর্ক এদের মধ্যে নেই ?
তাহলে আসুন দেখা যাক এসব মন্দিরের মধ্যে আর কোন সম্পর্ক আছে কিনা ! আশ্চর্যজনক ভাবে সত্যি এটাই যে, এই মন্দিরগুলি সবই একই ৭৯° দ্রাঘিমা রেখায় অবস্থিত। বিস্ময়কর হল, কোন প্রকার স্যাটেলাইট প্রযুক্তি, জিএসপি বা অনুরূপ কৌশল ছাড়াই তখনকার স্থপতিরা শত শত কিলোমিটার দূরবর্তী এতগুলো মন্দিরকে একই দ্রাঘিমারেখায় কিভাবে স্থাপন করেছিলেন ! প্রত্যেকটি মন্দিরের পৃথক দ্রাঘিমাংশের দিকে খেয়াল করুন :
১। কেদারনাথ: ৭৯.০৬৬৯°।
২। কলহস্তী: ৭৯.৭০৩৭°।
৩। একাম্বরনাথ: ৭৯.৭০৩৬°।
৪। তিরুবনমালী: ৭৯.০৭৪৭°।
৫। থিরুবনইকবাল: ৭৮.৭১০৮।
৬। চিদাম্বরম নটরাজ: ৭৯.৬৯৫৪°।
৭। রামেশ্বরম: ৭৯.৩১২৯°।
৮। কালেশ্বরম: ৭৯.৯০৬৭°।
নিচের ছবিটি দেখুন। সবগুলো মন্দিরই একটি সরলরেখায় অবস্থিত। আশ্চর্যজনক হল, তখনকার স্থপতিরা কত উন্নত মানের প্রযুক্তির অনুশীলন করতেন, যা এই যুগেও আমাদের কাছে সহজবোধ্য নয়।
আরো আশ্চর্যজনক হল, এই সবগুলো মন্দিরই প্রকৃতির ৫টি চিরন্তনী বিষয়কে উপস্থাপন করে, যাদের একত্রে " পঞ্চতত্ব" বা "পঞ্চভূত" বলা হয়। এগুলো হল ভূ বা পৃথিবী, বারি বা জল, পাবক বা আগুন, পবন বা বায়ূ এবং ভূত বা স্থান বা মহাশূন্য। এই পাঁচটি বিষয় দ্বারা উপরের আটটির মধ্যে পাঁচটি শিব মন্দিরকে এইভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যে -
১। তিরুবনমালী মন্দিরকে জল দ্বারা,
২। থিরুবনইকবাল মন্দিরকে অগ্নি দ্বারা,
৩। কলহস্তী মন্দিরকে বায়ূ দ্বারা,
৪। একাম্বরনাথ মন্দিরকে পৃথিবী দ্বারা এবং
৫। চিদাম্বরম মন্দিরকে মহাশূন্য দ্বারা উপস্থাপন করা হয়েছে। এই পাঁচটি মন্দির একত্রে বাস্তু, বিজ্ঞান এবং বেদ এর মহামিলনকে উপস্থাপন করে।
এই মন্দিরগুলোর মধ্যে আরো কিছু ভূতাত্ত্বিক বিশেষত্ব আছে। এই পাঁচটি মন্দির আসলে যোগ বিজ্ঞানের সাহায্যে পরস্পরের প্রতি এক বিশেষ ভৌগলিক অবস্থানে নির্মিত, যার সাথে বিজ্ঞান এবং মানবশরীরবৃত্তীয় বিষয়াদির সাথে সম্পর্ক রয়েছে।
এই মন্দিরগুলো আজ থেকে অন্তত চার হাজার বছর আগে নির্মাণ করা হয়েছিল। সে সময় এসব স্থানের অক্ষাংশ বা দ্রাঘিমাংশ মাপার মত কোন স্যাটেলাইট প্রযুক্তি বা জিপিএস ছিলনা। সেই সময়ে এতগুলি মন্দির এত নির্ভুলভাবে একটি সরলরেখায় কিভাবে স্থাপন করা হয়েছিল তা ঈশ্বরই জানেন।
এই সরলরেখাটিকে বলা হচ্ছে "শিবশক্তি অক্ষ রেখা"। এই রেখাটির ৮১.৩১১৯° পূর্ব অক্ষাংশে রেখে কৈলাশের সবগুলো শিব মন্দির নির্মিত হয়েছে। কেন তা ঈশ্বর জানেন।
মহাকালের সাথে শিবজ্যোতির্লিঙ্গম এর আরো বিশেষ কিছু সম্পর্ক রয়েছে ! সনাতন ধর্মে জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চার জন্য উজ্জয়ীনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান। এই উজ্জয়ীনি থেকে বিভিন্ন জ্যোতির্লিঙ্গম সমূহের মধ্যবর্তী দূরত্বওগুলি দেখুন কতটা চমকপ্রদ -
উজ্জয়ীনি থেকে সোমনাথ ৭৭৭ কিলোমিটার।
উজ্জয়ীনি থেকে ওঙ্কারেশ্বর ১১১ কিলোমিটার।
উজ্জয়ীনি থেকে ভীমাশঙ্কর ৬৬৬ কিলোমিটার।
উজ্জয়ীনি থেকে কাশী বিশ্বনাথ ৯৯৯ কিলোমিটার।
উজ্জয়ীনি থেকে মল্লিকার্জুন ৯৯৯ কিলোমিটার।
উজ্জয়ীনি থেকে কেদারনাথ ৮৮৮ কিলোমিটার।
উজ্জয়ীনি থেকে ত্র্যম্বকেশ্বর ৫৫৫ কিলোমিটার।
উজ্জয়ীনি থেকে বৈজুনাথ ৯৯৯ কিলোমিটার।
উজ্জয়ীনি থেকে রামেশ্বরম ১৯৯৯ কিলোমিটার।
উজ্জয়ীনি থেকে নৌশেশ্বর ৫৫৫ কিলোমিটার।
সনাতন ধর্মতত্বে কোন কিছুই অপ্রয়োজনীয় ছিল না এবং বিনা কারনে কোন কিছুই করা হয়নি। অতীতে সনাতন ধর্মে উজ্জয়ীনিকে বিবেচনা করা হত বিশ্বের (ভূ-গোলকের) কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে। সেই হিসেবে এখানে প্রায় ২০৫০ বছর পূর্বে ভূ-তত্ব, সূর্য এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানের সনাতন ধর্মীয় বিভিন্ন পরিমাপের জন্য হস্তচালিত কিছু যন্ত্রপাতি উদ্ভাবন করা হয়েছিল। পরবর্তীতে, আনুমানিক ১০০ বছর আগে ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা যখন ভূ-গোলকের মাঝামাঝি একটি কাল্পনিক রেখা টানেন, তখনও এর কেন্দ্রীয় এলাকা ছিল ঐ উজ্জয়ীনি । বর্তমান সময়েও বিশ্বের অধিকাংশ বিজ্ঞানী সূর্য ও মহাকাশ নিয়ে গবেষণার কাজ করতে উজ্জয়ীনিতেই আসেন।
তথ্যসূত্রঃ শিবগোপাল ব্যানার্জীর ফেইসবুক থেকে
No comments:
Post a Comment
পোস্টটি ভালো লাগলে কমেন্ট করুন। আপনার কোন তথ্য সংরক্ষণ বা প্রকাশ করা হবে না। আপনি Anonymous বা পরিচয় গোপন করেও কমেন্ট করতে পারেন।