বিবিসি বাংলার খবর আমি খুব ছোট বেলা থেকে শুনতাম। যখন বুঝতে শিখিনি তখন থেকে। মানে আমার বাবা ছিলেন বিবিসির ভক্ত। সেই সূত্রে আমারও প্রচন্ড ভালো লাগতো। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সময়েও বিবিসির অবদান ছিল অসামান্য। তারা খুব ভালো মানের সংবাদ পরিবেশন করতো প্লাস দুই বাংলার মধ্যে একটা সম্প্রীতি বজায় রাখতো। দুই বাংলাকে ফোকাস করা হতো সমান ভাবে। রাজনীতির সাথে বিজ্ঞানের আসর বা খেলাধুলা প্রায় সমান ভাবে গুরুত্ত্ব দেয়া হতো। কিন্তু আজকাল বিবিসির সংবাদ ফেসবুকে দেখলে বা রেডিওতে শুনলে
কয়েকটি জিনিস স্পষ্ট হয়ে যায়। তা হলো : ১. পলিটিস্ককে বা ধর্মকে অন্যান্য বিষয়ের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্ত্ব দেয়া।
২.হিন্দু বিদ্বেষী মনোভাব
৩. ভারত বিরোধী মনোভাব
৪. ইসলামের নেগেটিভ সাইড যতদূর সম্ভব এড়িয়ে চলা
৫. বাংলাদেশ বা পাকিস্তানের নেগেটিভ সাইড যতদূর সম্ভব এড়িয়ে চলা।
আসুন বিষয় গুলো পর্যালোচনা করা যাক। প্রথমে এক নম্বরে আসি !
১. ধর্ম বা পলিটিস্ক:
একটু খেয়াল করে দেখুন বিবিসিতে ৯৯.৯৯% ধর্ম বা পলিটিস্ক বিষয়ে নিউজ করা হয়। অন্যান্য বিষয় যেমন বিজ্ঞানের আসর, শিক্ষা, ভ্রমণ, খেলাধুলা সৌন্দর্য্য ইচ্ছাকৃত ভাবে এড়িয়ে যাওয়া হয় অথবা খুবই কম পরিবেশন করা হয়।এমনকি এখন আরো একটি সংবাদের আধিক্য দেখা যাচ্ছে তা হলো কারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে। কেউ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলে তা সাথে সাথে বিবিসি বাংলার হেডলাইন হয়ে যায়। বিষয়টা এখন এমন হয়েছে যেন বিবিসি বাংলা ইসলাম প্রচারের দায়িক্ত নিয়েছে।
২. হিন্দু বিদ্বেষী মনোভাব :
একটু খেয়াল করে দেখুন বিবিসি বাংলা ভারতের মুসলমানদের পান থেকে চুন খসলে তা হেডলাইন করে ফেলে। এমন কোন সিঙ্গেল ঘটনা নেই যা বিবিসি বাংলা হেডলাইন করেনি। অন্যদিকে বাংলাদেশের হিন্দুদের উপর ঘটে যাওয়া নির্যাতন বিবিসি বাংলা শুধু মাত্র বড় ধরণের ঘটনা গুলো ফোকাস করা। ছোট ছোট কোন ঘটনা নিয়ে নিউজ করে না যা ভারতের মুসলমানদের ক্ষেত্রে উল্টো।সম্প্রতি বাংলাদেশের পলাশ রায় নাম একজন আইনজীবীকে জেলের ভিতর পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। বিবিসি বাংলা এই সংবাদটিও এগিয়ে গেছে। সংবাদটি তারা প্রকাশ করে দুই সপ্তাহ পরে যখন ব্যারিস্টার সুমন নামে একজন আইনজীবি এটা নিয়ে হাইকোর্টে রীট করেন।
৩. ভারত বিরোধী মনোভাব :
একটু লক্ষ্য করে দেখুন বিবিসি বাংলায় ভারত নিয়ে জেসন নিউস করা হয় তার মধ্যে নেগেটিভ নিউজই বেশি। পজিটিভ নিউজগুলো এড়িয়ে যাওয়া হয়। আমি বলছি না যে ভারতে খারাপ কিছু ঘটে না। কিন্তু প্রতিনিয়ত শুধু খারাপ জিনিসকে ফোকাস করা উদ্দেশ্য প্রবণমূলক বলে আমি মনে করি। যেমন ধরুন ভারতের স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ বিশ্বব্যাপী খুবই প্রশংসিত হয়েছে। এই স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করার ক্ষমতা বিশ্বের ৬০টি মুসলিম দেশের কারো এখনো হয়নি। অথচ এসব নিয়ে কোন নিউজ করা হয় না বা করলেও নাম মাত্র। আবার ধরুন ভারতের ডাক্তারদের বিশ্বব্যাপী খ্যাতি। আপনি যদি ইউরোপ আমেরিকায় যান তাহলে দেখবেন সেখানকার মানুষ একজন ভারতীয় ডাক্তার পেলে আর নিজ দেশের ডাক্তার দেখায় না। কিন্তু এসব নিয়ে বিবিসি বাংলা কোন রিপোর্ট করে না। রিপোর্ট করে ভারতে ডাক্তারদের কোন দুর্নীতি ধরা পড়লে। যেমন পশ্চিমবঙ্গে ডাক্তারদের কিছু দুর্নীতি ধরা পড়লে তা নিয়ে অন্তত ১৫ দিন হেডলাইন করে গেছে যাতে বাংলাদেশ থেকে রোগী না যায় বা নিরুৎসাহিত হয়। এরকম অনেক উদহারণ দেয়া যাবে।
৪. ইসলামের নেগেটিভ সাইড যতদূর সম্ভব এড়িয়ে চলা:
একটি জিনিস খেয়াল করবেন বিবিসি ইসলামের নেগেটিভ সাইড মোটেও ফোকাস করে না। যেমন ধরুন পৃথিবীর অনেক মুসলিম দেশে সাংবিধানিক ভাবে এবং বাকিগুলোতে অলিখিত ভাবে শরিয়া আইন আছে। এই শরিয়া আইনে ইন্দোনেশিয়ায় কোন মেয়ে প্রকাশ্যে কোন ছেলের হাত ধরলে তাকে প্রকাশ্যে ৫০০ বার বেত্রাঘাত করে শরিয়া পুলিশ। কত মর্মান্তিক ! কিন্তু মানুষ ইটা দেখে উল্লাস করে ! আবার আফগানিস্তানসহ অনেক মুসলিম দেশে মেয়েরা ফেইসবুক ব্যবহার করার জন্য জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছে। আবার কোন কোন মুসলিম দেশে মেয়েরা ফেইসবুক ব্যবহার করার জন্য জীবন্ত পাথর ছুড়ে হত্যা করা হয়। ইসলামের সূতিকাগার সৌদি আরবে কেউ চুরি করলে বিনা বিচার হাত কেটে দেয়া হয়।এসব নিয়ে বিবিসি বাংলা কখনোই একটি রিপোর্ট করে না। অবিরাম রিপোর্ট করে ভারতের কোন ধর্মীয় গুরুর যৌন কেলেঙ্কারি ধরা পড়লে। কিন্তু বাংলাদেশ বা পাকিস্তানে আমরা মাদ্রাসা শিক্ষক দ্বারা অনেক যৌন নির্যাতন সংবাদ মাধ্যম বা ফেসবুকে ভিডিও দেখি। এমনকি বাচ্চারও নিস্তার পায় না অথচ বিবিসি নীরব !
৫. বাংলাদেশ বা পাকিস্তানের নেগেটিভ সাইড যতদূর সম্ভব এড়িয়ে চলা :
পাকিস্তানের পুরা দেশটা জঙ্গিতে ভরা। তা নিয়ে কোন রিপোর্ট কখনোই বিবিসি করে না। পাকিস্তানের আছে ভয়াবহ অনার কিলিং আছে ধর্ষণ। বাংলাদেশেও আছে ভয়াবহ ধর্ষণ। বাংলাদেশে ৫ বছরের বাচ্চাকে যৌনাঙ্গ ব্লেড দিয়ে চিরে বড় করে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে, ঘটে প্রেগন্যান্ট মহিলাকে লাঠি মেরে বাচ্চা মেরে ফেলার ঘটনা। এসব সময় বিবিসি নীরব। অথচ ভারতে কোন ধর্ষণের ঘটনা ঘটলে বিবিসি নিয়মিত আপডেট দিয়ে থাকে। বাবরি কান্ড নিয়ে বিবিসি শতশত রিপোর্ট করেছে। কিন্তু কখনোই রিপোর্ট করেনি কেন বাবরি কাণ্ডের পর পাকিস্তানের হিন্দুর সংখ্যা মাত্র কয়েক মাসে ১৫% থেকে নেমে ১% এ আসে ! তুলে ধরা হয়নি বাবরি কাণ্ডের পর বাংলাদেশের মন্দির ভাঙা বা হিন্দুদের উপর নির্যাতনের কাহিনী। বাংলাদেশের রমনা কালী মন্দির মুজিব সরকার বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে সেই মন্দিরের জায়গায় রমনা পার্ক করেছে। অথচ তা নিয়ে কোন দিন রিপোর্ট হয়নি। যখন বাংলাদেশ বা পাকিস্তানে হাজার হাজার মসজিদ ধ্বংস করা হয়েছে বা হচ্ছে তখন শুধু বাবরি মসজিদ নিয়ে কেন এতো চুলকানি ? আমেরিকার মুসলমানরা ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে পাশে থাকা মসজিদকে বহুতল মসজিদে রূপান্তর করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেক্যুলার বারাক ওবামা সৌদির সাথে আঁতাত করে সেই স্বপ্ন ধুলার সাথে মিশিয়ে দিয়েছে। তা নিয়ে কোন রিপোর্ট নেই কেন ? বাবরি নিয়ে ভারতের মুসলমানরা যতটুকু বিচার পেয়েছে পৃথিবীর অন্য কোন নন-মুসলিম দেশে এরকম কিছু ঘটলে তার সিকি ভাগও পেট না তা হরফ করে বলা যায়। ভারতে যাই ঘটুক ভারত এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় এবং শক্তিশালী গণতান্ত্রিক দেশ বা বিশ্বের গণতন্ত্রের সূতিকাগার ব্রিটেন বা আমেরিকা এক বাক্যে স্বীকার করে।অথচ বিশ্বের ৬০টি মুসলিম দেশের কোথাও গণতন্ত্র নেই বললে চলে। সুতরাং আমাদের গভীর ভাবে ভেবে দেখা দরকার বিবিসি বাংলার সংবাদ পরিবেশনের ধারা কেন উদ্দেশ্যমূলক ভাবে হচ্ছে?
কারা চালাচ্ছে বিবিসি বাংলার ফেইসবুক পেইজ ?
বিবিসি বাংলার ফেইসবুক পেইজের ট্রান্সপারেন্সি থেকে জানা যাচ্ছে যে তাদের ফেইসবুক পাতার মোট এডমিনের সংখ্যা ৮৩ জন। যাদের মধ্যে ৫৪ জন ইংল্যান্ডের, ২২ জন বাংলাদেশের, ৫ জন ভারতের, ১ জন জার্মানির ও ১ জন ভিয়েতনাম হতে। কথা হলো বিবিসি বিশ্বের সবচেয়ে বড় একটি নিউজ মিডিয়া হলেও বিবিসি বাংলার এতো জন এমপ্লয়ি থাকার কথা না। আপনি যখন রেডিওতে বিবিসি বাংলার খবর শুনেন তখন খেয়াল করবেন বিভিন্ন দেশ মিলে সর্বোচ্চ ৫-৭ জন সাংবাদিক আছেন। কিন্তু কথা তাদের ফেইসবুক পেইজে কেন ৮৩ জন অ্যাডমিন? বাংলাদেশের মতো ছোট দেশে কেন ২২ জন অ্যাডমিন?এসব কারণের বিবিসি বাংলা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন হচ্ছে বিবিসি বাংলা কি হিন্দু ও ভারত বিরোধী প্রপোগান্ডা নিয়ে কাজ করছে ?
No comments:
Post a Comment
পোস্টটি ভালো লাগলে কমেন্ট করুন। আপনার কোন তথ্য সংরক্ষণ বা প্রকাশ করা হবে না। আপনি Anonymous বা পরিচয় গোপন করেও কমেন্ট করতে পারেন।