যেখানে একজন বাঙ্গালী হিন্দু পাকিস্তানে যে এখনো হিন্দু আছে কিনা সেটাও জানে না সেখানে আফগানিস্তানী হিন্দুদের অবস্থা না জানাটাই স্বাভাবিক !তবে প্রতিটি বাংলাদেশী হিন্দুর জন্য এই সাবেক গান্ধার রাজ্য ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের প্রকৃত উদহারণ হতে পারে। তাই একটু মন দিয়ে পড়ুন।
সনাতন শাস্ত্র বলে,
সংস্কৃতঃ वसुधैव कुटुम्बकम
বাংলাঃ সমগ্র বিশ্ব এক পরিবার।
সূত্রঃ(মহা উপনিষদ,৬/৭২)
অর্থাৎ পৃথিবীর সকলেই এক পরিবার।আর সকলকেই আমাদের পরিবারের সদস্য।আমাদের উচিত এ বিশ্বব্যাপী পরিবারের সদস্যদের পাশে থাকা,খোঁজ খবর নেয়া,কেউ বিপদে পড়লে এগিয়ে যাওয়া।
আসুন আজ আমরা জানি আমাদের এই বিশ্বব্যাপী পরিবারের আফগানিস্তানী হিন্দু ভাই,বোন, আত্মীয়রা কেমন আছে।
সমীক্ষা মতে আফগানিস্তানে হিন্দু ও শিখ জনসংখ্যা দিন দিন কমছে।
আফগানিস্তানী সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণাবিদ এহসান শায়েগান (Ehsan Shayegan) বলেন,"আপনি যদি যদি ১৯৭০ সাল থেকে জনসংখ্যার পরিসংখ্যান দেখেন তাহলে দেখতে পাবেন কি দ্রুত হারে হিন্দু ও শিখদের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে!"
"১৯৭০ সালে ৭ লক্ষাধিক হিন্দু ও শিখ থাকলেও বর্তমানে এদের সংখ্যা ৭ হাজারের কাছাকাছি চলে এসেছে!"
কাবুল আফগানিস্তানের রাজধানী!সেখানে ৩হাজার হিন্দু ও শিখের বসবাস! যেখানে ১৯৯২ সালেও ২লক্ষাধিক হিন্দু ও শিখ ছিলো!!
তালেবান শাসনামলে হিন্দুদের উপর চলে চরম অমানবিক বর্বরতা!!
কেবল হিন্দু হওয়ার কারনে হিন্দুদের জমি দখল করা হয়,ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করা হয়! এমনকি হত্যাও করা হয় হিন্দুদের!
হিন্দুরা প্রাণ বাঁচাতে পাকিস্তান ও ভারতে আশ্রয় নেয়!
সাবেক রাষ্ট্রপতি হামিদ কারজাই এর শাসনামলের ১ম দিকটা ভালো কাটলেও পরবর্তীতে হামিদ কারজাইয়ের দলে,প্রশাসনে ঢুকে পড়ে উগ্রবাদীরা!! আবার চলে উগ্রবাদ ও হিন্দু নিধন!!
হিন্দুদের জমিজমা,সম্পদ লুটপাট শুরু হয়!!জোর করে দখল করে নেয়া হয়!!
আফগানিস্তানের আরেকটি রাজ্য কোস্টে শত হুমকি ও আতঙ্কের মাঝেও বেঁচে ছিলো শতাধিক হিন্দু পরিবার!!কিন্তু জঙ্গিদের হুমকি ধামকি আর প্রাণটুকু বাঁচাতে শেষপর্যন্ত ওরাও কোস্ট ছেড়ে কেউ কাবুল আবার কেউ ভারতে চলে গেছে!!
এখন কোস্টে (Khost) কোন হিন্দু বসবাস করে না।
আফগানিস্তানী হিন্দু রামনাথ বলেন,"আমরা যদি কাউকে আঘাত না করি তবে কেন আমাদের উপর আঘাত হয়??সকালে ঘুম থেকে উঠে বিকেলে জীবন্ত ঘরে ফেরার নিশ্চয়তাটুকুও নেই আমাদের!"
কদিন আগেও (২০১৬ সালের ২৯ শে ডিসেম্বর) গুলি করেরে নীরমোহন সিং নামে এক ব্যাক্তিকে হত্যা করা হয়!!
আফগান হিন্দুরা প্রকাশ্যে স্বধর্ম পালন করতে পারেনা,হিন্দু মহিলাদের বোরকা পরে বাইরে বের হতে হয়,হিন্দু বাচ্চারা স্কুলে পর্যন্ত যেতো পারে না!
আর মৃতদেহ সৎকারে পর্যন্ত হামলা চালায় উগ্রবাদী মুসলিমরা!!
আফগানিস্তানী হিন্দুদের এই করুণ অবস্থা অস্বীকার করতে পারলেন না আফগানিস্তানের তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী কামাল সাদাতও!!
তিনি বলেন হিন্দুদের অবস্থা উন্নয়নের জন্য নাকি কাজ চলছে!!
সাম্প্রদায়িকতা আর উগ্রবাদ থেকে বাদ যায় নি আফগানিস্তানের সংবিধানও!!
সংবিধানের ৬২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোন অমুসলিম রাষ্টপতি হতে পারবে না!
এমনকি কখনো কখনো আদালতে বিচারের জন্যে গেলে জিজ্ঞাসা করা হয় ওরা আফগানি কিনা!!
(অর্থাৎ হিন্দুদের আফগান নাগরিকত্বও আজ হুমকিতে)
বহু হিন্দু ও শিখ পরিবার হেলমান্দ প্রদেশ ছেড়ে এসেছে!ওখানে তালেবান হুমকি দিয়েছে " মুসলিম হও নাহলে হত্যা করব!বাঁচতে চাইলে প্রত্যেক পরিবারকে প্রতি মাসে ২লক্ষ আফগানি দিতে হবে।
মৃত্যুর পরও রেহাই নেই আফগানিস্তানী হিন্দুদের!
মৃতদেহ শশ্মানে দাহ করতে গেলে উগ্রপন্থী মুসলিমেরা পাথর ও ইট ছুড়ে মারে!
পুলিশ পাহারায় মৃতদেহ দাহ করতে হয়!
আফগানিস্তানে উগ্রপন্থার শিক্ষা নিয়ে বড় হচ্ছে মুসলিম শিশুরাও!
আট বছর বয়সী জেসমিত সিং এখন আর স্কুলে যায় না।স্কুলে হিন্দু শিশুদের শয়তান!কাফির! বলে গালাগাল ও ইট ছুড়ে মারে অন্যান্য মুসলিম শিশুরা!
তাই আফগানিস্তানের হিন্দু শিশুরা প্রাইভেট স্কুলে অথবা মন্দির স্কুলে পড়ে!
বহু হিন্দু ও শিখ ইতিমধ্যে প্রাণে বাঁচতে ভারত,জার্মানি,কানাডা,আমেরি
কাবুলের আশামাই মন্দিরের পুরোহিত নরেন্দ্র শর্মা বলেন,"আমরা ভারতে গেলে হই আফগানী আর আফগানিস্তানে থাকলে হই হিন্দু কাফির!আমরা কোথা যাবো?"
সূত্রঃ
Al Jazeera: The decline of Afghanistan's Hindu and Sikh communities
আল জাজিরা
Reuters: Afghanistan's dwindling Sikh, Hindu communities flee new abuses
রয়টার্স
আল জাজিরা অনুসারে, এক সময় আফগানিস্তান ছিল হিন্দুদের স্বর্গরাজ্য। আজ তা প্রায় শুণ্যের কোঠায়।১৯৭০ সালের পর অত্যাচারের কারণে হিন্দুদের হার ভয়ানক ভাবে কমতে থাকে। আফগান সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণাবিদ এহসান শায়েগান(Ehsan Shayegan) বলেন, ১৯৭০ সালের দিকে আফগানিস্তানে ৭ লক্ষের মতো হিন্দু ও শিখ বসবাস করতো । আজ তা ৭ হাজারের নিচেই এসে দাঁড়িয়েছে।
কাবুলের একটি গুরুদুয়ারার পুজারী অবতার সিং বলছিলেন, আমাদের জমি জোরপূর্বক দখল করে নিয়েছে সরকারের প্রভাবশালী লোকজনরা।আমাদের প্রতিনিয়ত জীবন নাসের হুমকি দেয়া হয়।
এই হলো আফগানিস্তানের হিন্দুদের অবস্থা।
অথচ এই আফগানস্থানই হিন্দু ও বৌদ্ধদের পূণ্যভূমি ছিল ।মহাভারতের গান্ধার এসেছিলেন আফগানের গান্ধার রাজ্য ( বর্তমান কান্দাহার) থেকে। হিন্দুকুশ পর্বত আজ সেখানে বিদ্যমান। শুধু পরিবর্তিত হয়েছে মানুষ গুলো ... রূপান্তরিত হয়েছে ইসলামিক হায়েনায়।
No comments:
Post a Comment
পোস্টটি ভালো লাগলে কমেন্ট করুন। আপনার কোন তথ্য সংরক্ষণ বা প্রকাশ করা হবে না। আপনি Anonymous বা পরিচয় গোপন করেও কমেন্ট করতে পারেন।